দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মানুষের আয়

আরিফুল ইসলাম: জীবন ধারণের জন্য মানুষের কিছু মৌলিক চাহিদা থাকে, যা ব্যতীত মানুষের জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়। আর মানুষের জীবন ধারণের জন্য এসব মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে দিনমজুর শ্রমজীবী যেসব মানুষের নুন? আনতে পান্তা ফুরায়, তাদের অবস্থা হয় অনেক শোচনীয়।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রধান খাদ্য চালের দাম ক্রমেই বাড়ছে এবং তা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করতে চলেছে। সবজিসহ বিভিন্ন কাঁচামালের মূল্য প্রতিদিনই ওঠানামা করে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের রোজকার আয়ের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে চাল-ডাল-শাকসবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য কিনতে। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সার্বক্ষণিক।

সরকারকে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে দক্ষতার সঙ্গে নজর রাখতে হবে, যাতে কেউ অতি মুনাফা অর্জনের আশায় সিন্ডিকেট না করে। পরিবহনসহ বিভিন্ন যেসব মাধ্যমে চাঁদাবাজি হয় তা বন্ধ করেও নিত্যপণ্যের দামের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখা সম্ভব। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা সরকারের দেশ পরিচালনার সফলতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। একটি সরকারের কাছ থেকে মানুষ মূলত কয়েকটি বিষয় প্রত্যাশা করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে দু’টি বিষয় প্রত্যাশা করে, তার একটি হলো আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, আর অন্যটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ। তাই এই দুটি রক্ষায় সরকার তার সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা করে মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত ও সাধারণ দিনমজুর মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগাতার বৃদ্ধি পায় তখন সেটা জনগণের মধ্যে যেমন হতাশার তৈরি করে তেমনি সরকার ও দেশের জন্য হয় অভিশাপস্বরূপ।

অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অবহেলা ও অনিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের কারণে দেশে নজিরবিহীনভাবে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। যার ফলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হয় সাধারণ মানুষের কাছে।

দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবন চালাতে গিয়ে সৎ ও কর্মজীবী মানুষের করুণ অবস্থা হয়। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেমন থাকে সীমিত, তেমনি জিনিসপত্রের বাজারদর দ্বারাও তা নিয়ন্ত্রিত থাকে।

সাধারণ মানুষ যে আয় করে তা দিয়ে তাকে হিসাব করে সংসার চালাতে হয়।

দ ব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই লাগামহীন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষের আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য একসঙ্গে নিতে হবে দুই দিক থেকে পদক্ষেপ। প্রথমত, সর্বস্তরের জনগণের ধারাবাহিক আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্য এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন তা স্থিতিশীল থাকে কিংবা বৃদ্ধি পেলেও তা যেন কখনো সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির যে হার তার ঊর্ধ্বে না ওঠে। আয় বাড়ানো ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এই উভয় দিক থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান স্থিতিশীল রাখা সম্ভব এবং তা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

মানুষের আয় বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রক্ষা করার জন্য এসব ব্যবস্থা করতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকারকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। সমাজের মানুষের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করে। মৌলিক চাহিদা মেটাতে না পারলে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়। ফলে নানান অপরাধের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণ মানুষের আয় আজ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বেশির ভাগ মানুষ বহু চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হন। ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রবণতাকে প্রতিহত করে সাধারণ মানুষকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে।

শিক্ষার্থী

ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়