সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পরিচালনা মুনাফা হয় ৩৩ কোটি তিন লাখ সাত হাজার টাকা। অপরদিকে কোম্পানিটির অপরিচালন আয় ছিল ২৪০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা পরিচালনা আয়ের প্রায় সাত দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। এর বড় অংশই এসেছে ব্যাংক সুদ থেকে। আর এর ওপর ভিত্তি করে মুনাফা ধরে রেখেছে যমুনা অয়েল।
গত জুন শেষে যমুনা অয়েলের ব্যাংক ডিপোজিটের পরিমাণ দুই হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। এর সুদবাবদ আয় হয় ২২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
যমুনা অয়েলের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল লিমিটেডের মোট জ্বালানি বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ছয় হাজার টন। ব্যয় বাদ দিয়ে এতে পরিচালনা মুনাফা হয় ৩৩ কোটি তিন লাখ টাকা। অপরদিকে অপরিচালন আয় হয় ২৪০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
এর মধ্যে যমুনার সহযোগী এমজেএল ও ওমেরা অয়েল বিনিয়োগ হতে ডিভিডেন্ট আয় ছিল ১৬ কোটি ৫৬ হাজার ৮৫ টাকা। স্থায়ী আমানতের সুদ থেকে আয় হয় ১৫৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি
আমানতের (এসটিডি) সুদ থেকে আয় হয় ৬৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
এর বাইরে কোম্পানিটি নিবন্ধন নবায়নের ফি ৩০ লাখ, গৃহনির্মাণে প্রদত্ত ঋণের সুদের আয় ১৩ লাখ, গাড়ি ক্রয়ে প্রদত্ত ঋণের সুদ আয় দুই লাখ, ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয় দুই কোটি ৬৮ লাখ, পুরনো সম্পত্তি বিক্রয়জনিত আয় সাত লাখ ও অন্যান্য আয় ছিল ২৯ লাখ টাকা।
এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি খাতে এ প্রতিষ্ঠানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মোট জ্বালানি বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৩৪ হাজার টন। এতে পরিচালনা মুনাফা ছিল ১১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অপরদিকে একই অর্থবছরের অপরিচালন মুনাফা ছিল ১৯৯ কোটি চার লাখ টাকা।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল এমজেএল ও ওমেরা অয়েল বিনিয়োগ থেকে ডিভিডেন্ট আয় ৬ কোটি ৯৬ লাখ, স্থায়ী আমানতের সুদ থেকে আয় ১২৬ কোটি ৭৯ লাখ, এসটিডির সুদ ৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়া
নিবন্ধন নবায়নের ফি ২৬ লাখ টাকা, গৃহনির্মাণে প্রদত্ত ঋণের সুদের আয় ১৩ লাখ, ভাড়া থেকে প্রাপ্ত
আয় দুই কোটি ৪৬ লাখ ও অন্যান্য আয় ছিল এক কোটি ১৮ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান ও যমুনা অয়েল কোম্পানির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম শেয়ার বিজকে বলেন, এখন বেসরকারিভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান জ্বালানি তেল আমদানি করছে। পাশাপাশি বাজারের কিছু কিছু পণ্যের চাহিদাও আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। ফলে অধিকাংশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের বিক্রয় গত বছরের তুলনায় বিক্রয় কমেছে। এজন্য পরিচালন মুনাফা করেছে। এত অপরিচালন আয় থেকে মুনাফা ধরে রাখা হয়েছে। তবে আগামীতে বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করি। এতে জ্বালানি থেকে আয় আবার বাড়বে।
জ্বালানি খাতের এ কোম্পানি গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যমুনা অয়েল লিমিটেডের মোট জ্বালানি বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ছয় হাজার টন। এর মধ্যে ডিজেল বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৯৩ হাজার টন, ফার্নেস অয়েল দুই লাখ ৩৯ হাজার, অকটেন ৪০ হাজার, পেট্রল ৪৫ হাজার ৬১৩ টন, কোরোসিন ৭২ হাজার ৯১৫ টন, জেবিও চার হাজার, লুব অ্যান্ড গ্রিজ অয়েল চার হাজার ২৬০, এলপিজি চার হাজার ও বিটুমিন পাঁচ হাজার ৩৫৮ টন।
যমুনা অয়েলে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণ, গত কয়েক বছরের দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসছে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা শুল্কমুক্ত জ্বালানি তেল ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল আমদানি করছেন সনাতন জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস পাওয়া, দ্রুত শিল্পায়ন না হওয়ায়। সার্বিকভাবে জ্বালানি খাতে অন্যান্য প্রতিযোগীদের অবস্থা শক্তিশালী হচ্ছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যয়ও
বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয় ও মুনাফা উভয়ই কমছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক জমার মুনাফাক থেকে আয় প্রতিবছর বৃদ্ধি করছে অপরিচালন আয়।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে দুই কোটি টাকা মূলধন নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় তেল কোম্পানি হিসেবে পাকিস্তান ন্যাশনাল অয়েল লিমিটেড (পিএনওএল) নামক কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ অ্যাব্যানড্যান্ড প্রপার্টি (কন্ট্রোল, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ডিস্পোজাল) আদেশ ১৯৭২ (পিও নং ১৬, ১৯৭২) বলে পাকিস্তান ন্যাশনাল অয়েল লিমিটেডকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। পরে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয় এবং এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল অয়েলস লিমিটেড। ১৯৭৩ সালে ১৩ জানুয়ারিতে এক সরকারি আদেশ বলে এর পুনঃনামকরণ করা হয় যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (জেওসিএল)। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন মালিকানাধীন এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হয়।




