ভেষজ উদ্ভিদের ভালো দাম নিশ্চিত করুন

নাটোরের ঔষধি গ্রামে উৎপাদিত ভেষজ পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত ওষুধ প্রস্তুতকারক কয়েকটি কোম্পানি, এমন খবর সংশ্লিষ্টদের জন্য ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্য বিক্রির একটা নিশ্চয়তা পেলেন। অন্যদিক থেকে দেখলে, ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল নিয়মিত জোগানোর উৎসও পেল কোম্পানিগুলো। তাদের জন্যও এটা ইতিবাচক। ভেষজ পণ্য উৎপাদনকারী কৃষকের পক্ষ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক দাম না পাওয়ার অভিযোগ অবশ্য মেলে কখনও কখনও। লোকসানের কারণে এ ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদনে নিরুৎসাহীও হন কেউ কেউ। এজন্য আমরা চাইব, উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে কৃষকের উৎসাহ ধরে রাখতে উৎসাহব্যঞ্জক দাম নিশ্চিতেও দৃষ্টি দেবে প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাহলে এসবের জোগান স্বাভাবিক রাখাও সহজ হবে।

বাজারে ভেষজ ওষুধের চাহিদা রয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে এর প্রতি একশ্রেণির মানুষ বরং বেশি আগ্রহী। রাসায়নিক ওষুধের তুলনায় এগুলোর দামও অপেক্ষাকৃত বেশি। তবু এর কাঁচামাল উৎপাদনকারীরা ভালো দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কেন, সেটা বড় প্রশ্ন। বস্তুত এসব পণ্য সাধারণের ভোগের জন্য ব্যাপকভাবে বিক্রিও হয় না। তাই এগুলোর উৎপাদনে কৃষককে উৎসাহ জোগাতে হলে ‘বাজারের নিয়ম’ই অনুসরণ করতে হবে। তুলনামূলক আর্থিক সুবিধা যে ফসলে বেশি, সেটির উৎপাদনে কৃষক আগ্রহী হবেন, এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় তারা ব্যাপকভাবে ভেষজ উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে কোম্পানিগুলোকেও কি কাঁচামালের সংকটে পড়তে হবে না? সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের এটা মনে রাখা ভালো, তারা উৎসাহব্যঞ্জক দাম নিশ্চিত করলে আরও বেশি চাষি এসবের উৎপাদনে আগ্রহী হবেন। তাতে বিদ্যমান পণ্যের বাজার বিস্তার এবং নতুন প্রোডাক্ট উৎপাদনের মতো সিদ্ধান্তে যেতে পারবেন তারা।

ভেষজ ওষুধ উৎপাদনকারী কিছু প্রতিষ্ঠান মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। লক্ষ্য পূরণে কোনো প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত পণ্যের দাম নিজস্ব নীতি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারণ করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে দেশীয় কাঁচামালে উৎপাদিত ওষুধের মতো পণ্যের দাম এত বেশি হওয়া উচিত নয়, যা কিনতে হিমশিম খেতে হয় ভোক্তাকে। যেসব পণ্যের কাঁচামালের জোগান স্বাভাবিক রয়েছে, সেগুলোর দাম মাত্রাতিরিক্ত হওয়া কি সংগত? ভেষজ ওষুধের প্রতি কিছু মানুষের বাড়তি আগ্রহের কারণেও কোম্পানিগুলো দেখাতে পারে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এমন নীতি অনুসরণে তাদের পণ্যের বাজারটি সংকীর্ণ হয়ে পড়তে পারে। কোনো পণ্যের বাজার বিস্তারের সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো তখন হয়ে পড়বে কঠিন।

দেশে আধুনিক ভেষজ ওষুধের বাজারেও প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এতেও পরিস্থিতির উন্নতি কেন হচ্ছে না, সেটা ভাবনার। সরকার কি এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে পারে না? মনে রাখতে হবে, কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ভেষজ ওষুধের মান নিয়ে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। এ ধরনের ওষুধ বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণার উদাহরণও রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ খাতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে জনস্বার্থে।