জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেছেন, রাতে কারওয়ান বাজারে যেসব মুরগি আসে, সেগুলোর ক্রয় রসিদে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। ক্রয় রসিদের গরমিলে বাড়ানো হচ্ছে মুরগির দাম। জালিয়াতি প্রতিরোধে অচিরেই রাতের বেলায় বাজার তদারকির জন্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন দল কাজ করবে। ব্যবসায়ীদের জন্য সতর্কবাণী থাকবে। মুরগির ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। শুক্রবার কারওয়ান বাজার পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এ কথা বলেন।
ডিএনসিআরপি পরিচালকের বক্তব্যে সাধারণ মানুষ আশান্বিত হবেন বলেই ধারণা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে সাধারণ মানুষের জন্য আমিষজাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস মুরগির মাংস। কিন্তু মুরগির যে দাম, তাতে মুরগি কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি ঠিক, মুরগির দাম খুব বেশি কমলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্তমানে খামারে মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকার মধ্যে। তাই এমন ব্যবস্থা নেয়া উচিত যাতে উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়; আবার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। মুরগির দাম কমাতে হলে এর উৎপাদন খরচও কমাতে হবে। সে লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ডিম ও মুরগির দাম কমানো-বাড়ানোর নেপথ্যে কারও কারসাজি আছে কি না, তাও খুুঁজে বরে করতে হবে। আমাদের মানে রাখতে হবে, দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা অনেকটা পূরণ হয় ডিম ও মুরগি থেকে। বলা হয়ে থাকে, মুরগির দামের কলকাঠি নাড়ায় হাতেগোনা কয়েকজন। গুটিকয়েক পোলট্রি কোম্পানির কারসাজিতেই হুটহাট দাম চড়ে, আবার হ্যাচারিদের বড় সিন্ডিকেটে বাচ্চার দাম বাড়ে, আবার সহনীয় হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে অসহায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারিরা। কদিন আগেই চারটি বড় প্রতিষ্ঠান তাদের খামারের গেটে কম দামে মুরগি বিক্রি শুরু করায় সেটির ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বাজারে। এতেই প্রতীয়মান হয়, বাজার ওঠানামায় তাদের বড় ভূমিকা রয়েছে। পোলট্রি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহƒত পোলট্রি খাদ্য ও ওষুধ আমদানিকারক তিন-চারটি প্রতিষ্ঠানও এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠান যে দামে মুরগির খাদ্য ও ওষুধ আমদানি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বাজারে ছাড়ে। কয়েক দিন আগে ডিএনসিআরপির অভিযান দেখে মুহূর্তেই ব্রয়লার মুরগির দাম কমে হয়ে যায় ২০০ টাকা কেজি। অভিযান শুরুর আগে দাম ছিল ২১০-২২০ টাকা। মুহূর্তেই সেই দাম কমে যায় অভিযানের খবরে।
কীভাবে দেশের সাধারণ মানুষের আমিষের সহজ উৎস মুরগি তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে। খামারিরা লোকসান দিয়েছেন, অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে এবং নতুন বাচ্চা তোলেনি। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ অনেক কমেছে। এছাড়া মুরগির খাবারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আবার অসাধু ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে বাচ্চার দাম ও খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই ভোক্তা, উৎপাদক, খামারি, ব্যবসায়ীসহ সবার স্বার্থ-সুরক্ষায় একটি শক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার।




