মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে বাজারের সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী, যার জের ধরে বাড়ছে বিও অ্যাকাউন্ট। এদিকে আইপিতে সবাই শেয়ার পাবেন এমন খবরে নিষ্ক্রিয় থাকা বিও অ্যাকাউন্ট সচল হতে শুরু করেছে।
যাদের অ্যাকাউন্টে এতদিন কোনো শেয়ার ছিল না কিংবা সামান্য কিছু শেয়ার ছিল তারাও পোর্টফলিওতে নতুন বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। মূলত আইপিওর শেয়ার পেতে সেকেন্ডারি মার্কেটে ন্যূনতম শেয়ার থাকতে হবে, এমন খবরেই বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন তারা।
গতকাল মতিঝিলের কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। এসব বিনিয়োগকারীর অনেকেই এসেছেন নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলোর খবর নিতে। এ ধরনের অ্যাকাউন্টে নতুন শেয়ার কিনতে দেখা গেছে অনেক বিনিয়োগকারীকে। কারণ এ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা আইপিরও শেয়ারে আবেদন করবেন।
এ প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আগে একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন নামে অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট খুলে আইপিরও শেয়ারে আবেদন করতেন, যে কারণে আমাদের পিছিয়ে যেতে হতো। যাদের একটি বা দুটি বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে তারা বেশিরভাগ সময় লটারিতে শেয়ার পেতাম না। বিএসইসি এখন যে নিয়ম করেছে তা আমাদের শেয়ার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে কারণে অনেকেই সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন।
সম্প্রতি বিএসইসি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনে লটারি প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী নতুন পদ্ধতিতে সেকেন্ডারি মার্কেটে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকলেই নতুন আসা কোম্পানির শেয়ার মালিক হতে পারবেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মূল্যায়ন কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভায় ইলেকট্রনিকস সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম হালনাগাদ করা, লট পদ্ধতি বাতিল করে আবেদন ফি নির্ধারণ ও নতুন কোম্পানির লেনদেন চালুর সময় কমিয়ে আনার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে শেয়ার লট প্রথা বাতিল করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নির্ধারণ করবে। মোট আবেদনকারী অনুযায়ী শেয়ার বরাদ্দ দিয়ে বাকি টাকা বিও অ্যাকাউন্টে ফেরত দেয়া হবে। আর সাবস্ক্রিপশন চালুর পর থেকে লেনদেন চালু পর্যন্ত সময় কমিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে কমিটি।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই আইপিওতে লটারি পদ্ধতি বাতিল করার কথা ভাবা হয়েছে। এতে সবারই শেয়ার পাওয়ার সুযোগ থাকবে। একজন বিনিয়োগকারীরা যদি প্রতিটি আইপিওর শেয়ার থেকে ৫০টি করেও শেয়ার পান তাহলে বছর শেষে তার পোর্টফলিওতে অনেকগুলো শেয়ার জমা হবে। এটা একজন বিনিয়োগকারীর জন্য অনেক বেশি ভালো হবে।
এদিকে বিএসইসির একটি সূত্র জানিয়েছে আইপিরও শেয়ার নিয়ে যারা কাজ করছে (কমিটি) তারা আমাদের কাছে আইপিওর শেয়ার পাওয়ার জন্য সেকেন্ডারি মার্কেটে ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে এটা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এখন পর্যন্ত এটা প্রস্তাব। তবে আইপিওর শেয়ার পেতে সেকেন্ডারি মার্কেটে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকার ইঙ্গিত দেন তিনি।
অন্যদিকে সবার জন্য শেয়ার পদ্ধতি চালু হলে বিও অ্যাকাউন্ট কমে যেতে পারে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। তাদের মতে আনুপাতিকহারে শেয়ার পেলে ভুয়া বিও অ্যাকাউন্ট কমে যাবে। কারণ প্রতিটি বিওতে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ না থকেলে তারা আবেদন করতে পারবেন না। যেসব আইপিও শিকারিরা ভিন্ন নামে শত শত অ্যাকাউন্ট খুলে আইপিও আবেদন করতেন তাদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে জয়তুন সিকিউরিটিজ ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, বিএসইসি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে যারা প্রকৃত বিনিয়োগকারী তারা শেয়ার পাবেন। তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক নিষ্ক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট এখন সচল হচ্ছে। এসব অ্যাকাউন্ট সচল হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে আইপিওর শেয়ারে আবেদন করা।