‘স্বাস্থ্য উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা জরুরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক:সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের জন্য নির্ধারিত বাজেট গত ১০ বছরে যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তা রাষ্ট্রের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। শুধু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমেই সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যয় কমানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। আর এর জন্য প্রয়োজন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। গতকাল ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘স্বাস্থ্য উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন চাই’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সভাপতিত্বে ও সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। সভায় অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ এক্সপার্ট আবু জামিল ফয়সাল, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এমএ মান্নান মনির এবং কচিকণ্ঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচএম নূরুল ইসলাম।

মিঠুন বৈদ্য বলেন, বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেলেও বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগ, যেমন হƒদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রাষ্ট্র বা জনগণের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ‘বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ লক্ষ্য বাস্তবায়নে চিকিৎসা নয়, বরং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

আবু জামিল ফয়সাল তার বক্তব্যে বলেন, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। রোগাক্রান্ত হওয়ার আগেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলা ও জীবনাচারের পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সর্বসাধারণের কাছে এসব সুবিধা পৌঁছে দিতে অবকাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবারের জোগান ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, একটি দেশের জনগণের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। জনগণকে সুস্থ রাখতে হলে সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল, কোমল পানীয়সহ সব স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের ওপর আরোপিত সারচার্জের অর্থে ‘হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

এমএ মান্নান মনির বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’-এর প্রয়োজনীয়তা, সুযোগ ও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি দেশের সব স্তরের মানুষের জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে ‘হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, এরই মধ্যে বিশ্বের ২৩টি দেশ হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এবং নির্ধারিত ফান্ড দ্বারা পরিচালিত এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে গবেষণার আলোকে কর্মপন্থা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই প্রতিষ্ঠান, যা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন নাটাব, দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ (আইডাব্লিউবি), ছায়াতল বাংলাদেশ, ফিমেল সাইকেলার্স অব বাংলাদেশ, সূর্য শিশির রানার্স কমিউনিটি, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, কেরানীগঞ্জ হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, কনফিডেন্ট মেমরিয়াল হাইস্কুল, বিআরডিএস, আইডিএফ, ডাস, অপ্সরী ওমেন ডেভলপমেন্ট অরগানাইজেশন ও দিশারী মহিলা কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিরা।