মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: মাত্র ১৩ কার্যদিবসের ব্যবধানে প্রতি শেয়ারে ১০ টাকা দর বেড়েছে সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ারে, শতাংশের হিসাবে যা ৪৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে বস্ত্র খাতের শেয়ার চাহিদা থাকলেও আর্থিকভাবে লোকসানি এ কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষেরও। ফলে কোম্পানিটিকে নোটিস দেয় তারা। খোদ কোম্পানি কর্তৃপক্ষও অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি নিয়ে অবাক। তারাও বলতে পারছেন না ঠিক কী কারণে দর বাড়ছে এ শেয়ারের।
সাম্প্রতিক বাজারচিত্রে দেখা গেছে, ১৩ কার্যদিবস আগে এ কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ২২ টাকা ৮০ পয়সা। এর পর থেকে অজানা কারণে দর বাড়তে শুরু করে। টানা দর বেড়ে গতকাল কিছুটা নি¤œমুখী অবস্থায় ৩২ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর কেন বাড়ছে, তা জানতে চেয়ে কোম্পানিকে নোটিস দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাদের কাছে দর বৃদ্ধি পেতে পারে, এমন সংবেদনশীল তথ্য নেই।
এদিকে বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করলে কোম্পানি সচিব ইফতেখার আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, শেয়ারদর কেন বাড়ছে, তা আমাদের জানা নেই। আর এটা আমাদের জানার কথাও নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি। এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল। আমরা তাদের জানিয়েছি, সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই।
এদিকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দিন দিন আরও নাজুক হচ্ছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির মুনাফা হয় এক কোটি ২২ লাখ টাকা। পরের বছর লোকসানে পড়ে কোম্পানিটি। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির লোকসান হয় এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরের বছর তা আরও বেড়ে হয় ১৭ কোটি টাকা।
এর আগে কোম্পানিটির নামে অভিযোগ করেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী। অভিযোগে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি ভুল তথ্য দেয়ার পাশাপাশি লোকসান দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছেন। ফলে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
সম্প্রতি বিএসইসিতে মো. মামুন অর রশিদ, মজিবুর রহমান ও মমিনুল ইসলাম নামে তিন বিনিয়োগকারী লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত এ অভিযোগে বলা হয়েছে, বস্ত্র খাতের কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বোনাস শেয়ার দিয়েছে। মাঝখানে ২০১৫ সালে তারা বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। পরবর্তীকালে ২০১৯ ও ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করে। কারণ হিসেবে ব্যবসায় লোকসান হওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মনে করে, তথ্যটি সঠিক নয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির দুটি ইউনিটই এখন পুরোদমে চলছে। সেখানে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ শ্রমিক কর্মচারী কাজ করছেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির লোকসানে থাকার প্রশ্নই আসে না। তারা জানান, কোম্পানি যে আর্থিক প্রতিবেদন দিয়েছে, তা আমাদের কাছে স্বচ্ছ নয়। এটা নিজেদের ইচ্ছামতো ও পরিচালকরা লাভবান হওয়ার জন্য করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য উৎপাদনের খরচ (কস্ট অব প্যাকিং ম্যাটেরিয়ালস) বেশি দেখানো হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এ খরচ দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে চার কোটি ৪২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। একইভাবে অভিযোগপত্রে বিদ্যুৎ বিলসহ অন্য খরচের যে হিসাব দেখানো হয়েছে, তাও অস্বাভাবিক। এ কারণে দক্ষ নিরীক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।