অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করল ভারত

প্রতিনিধি, বেনাপোল: হঠাৎ করে ভারত থেকে বাংলাদেশে করোনার চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত জরুরি তরল অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। গত চার দিনে কোনো অক্সিজেনবাহী গাড়ি আসেনি। তবে গত ২১ এপ্রিলের আগে এক সপ্তাহে ৪৯৮ মেট্রিক টন ৮৪০ কেজি তরল অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। যার আমদানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ১৬৫ মার্কিন ডলার। ২৯টি ট্যাংকারে এই তরল অক্সিজেন দেশে আসে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্ক না। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সূত্র ধরে এই ক্রান্তিকালে সীমিত পরিসরে হলেও দেশটি অক্সিজেন রফতানি সচল রাখবে দেশটি।

জানা যায়, দেশের চিকিৎসা খাতে অক্সিজেনের চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। প্রতি মাসে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি হয়ে থাকে। করোনাকালে আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেনের চাহিদা আরও বাড়ে গেছে।

কিন্তু এরমধ্যেই বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। দেশীয় আমদানিকারকরা জানান, ভারতীয় রফতানিকারকরা বলছেন— ভারতীয় অক্সিজেন রফতানি বন্ধে তাদের ওপর চাপ রয়েছে। তাই ভারতে ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা ভেবে বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে বলে জানা গেছে।

হঠাৎ করে আমদানি বন্ধ হয়ে পড়ায় যেমন ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তেমনি দেশে চিকিৎসা খাতও বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ল বলেও মন্তব্য করেন আমদানিকারকরা। অক্সিজেন পরিবহনকারী বাংলাদেশি ট্রাক চালকেরা জানান, গত চার দিন ধরে বেনাপোল বন্দরে ট্রাক নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ভারত থেকে কোনো অক্সিজেন বন্দরে প্রবেশ করেনি।

অক্সিজেন আমদানিকারকের প্রতিনিধি রাকিব হোসেন জানান, ভারতীয় রফতানিকারকেরা তাদের জানিয়েছেন সংকটের কারণে তারা বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি করতে পারছেন না। এছাড়া রফতানি না করার বিষয়ে ভারত সরকারেরও কিছুটা চাপ রয়েছে।

বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ চলছে। এতে আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন অতিব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে অক্সিজেন স্বল্পতা থাকলেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে তরল অক্সিজেন দেবে বলে আশা রাখি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বাংলাদেশে চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রায় সবকিছুই আসে ভারত থেকে। হঠাৎ বন্ধে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে আমরা আশা করছি বন্ধুত্বের সূত্র ধরে ভারত সরকার করোনার এ সময়ে অল্প করে হলেও বাংলাদেশে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, সবশেষ ২১ এপ্রিলের আগে ৪৯৮ মেট্রিক টন ৮৪০ কেজি তরল অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে আমদানি হয়। প্রতি মেট্রিক টন অক্সিজেনের আমদানি মূল্য ছিল ১৬৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৪ হাজার ১৯০ টাকা।