নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বৃহস্পতিবার রূপসী কাজীপাড়া এলাকার জৈনপুরি আশরাফিয়া টেক্সটাইল কারখানায় (মঞ্জু টেক্সটাইল) গ্যাসের মিটার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডে চার নিরাপত্তা প্রহরী দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে।
গণমাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানিয়েছেন, মে দিবসের কারণে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ জন্য লাইনে গ্যাসের উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়ে মিটারে বিস্ফোরণ হয়। সেখান থেকে আগুন ধরে চারজন নিরাপত্তা প্রহরী দগ্ধ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানোর আগেই কারখানার লোকজন ও স্থানীয় লোকজন মিলে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জনের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানায়, বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আঘাত গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের শরীরের ৩৪ থেকে ৫৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ‘অনাকাক্সিক্ষত’ দাবি করে কারখানার মালিক ঘটনার পর আপাতত কারখানা বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। শ্রমিকদের সব চিকিৎসার ব্যয় কারখানা থেকে বহন করা হবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
আলোচ্য ঘটনায় কেউ নিহত হওয়ায় হয়তো তা আলোচনায় আসবে না। কিংবা এটি নিশ্চয়ই একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধ কল্পে কারখানা কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, প্রশাসনের সেদিকে মনোযাগ দিতে হবে। অবশ্যই রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট সময় পরপর পরখ করে দেখতে হবে অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা হালনাগাদ করা আছে কিনা এবং তা থাকলে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট আছে, এ মর্মে সনদ নিতে হবে। এটি দুঃখজনক অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর ব্যাপক ক্ষতি ও প্রাণহানির পর সামনে আসে, প্রকৃতই যথাযথ মান সংরক্ষণ করা হয়নি এবং বছরের পর বছর পরিদর্শন ও মূল্যায়ন হয়নি। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাঠকর্মীরা মাঠে না গিয়ে অফিসে বসেই সনদ দিয়েছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানি করে, সেখানে ম্যাটেরিয়াল সেফটি ডেটা শিট (এমএসডিএস) থাকে। কী ধরনের দাহ্য পদার্থ কনটেইনারে আছে, তা লেখা থাকবে।
এর পাশাপাশি এসব পদার্থের ব্যবহার কেমন করে করতে হবে, তাও উল্লেখ থাকতে হবে। দাহ্য পদার্থ ভেদে অগ্নিনির্বাপণের পদ্ধতিও ভিন্ন হয়। সব আগুন পানিতে নেভে না, বরং বেড়ে যায়। কোনো প্রতিষ্ঠান অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকুক বা না থাকুক, ওই প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের জনবলকে দুর্ঘটনা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান স্থানে বিশেষ করে প্রবেশপথে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা থাকতে হবে। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। হতাহতের সংখ্যা বিবেচনা না করে আমাদের দায়িত্বহীনতায় যেন কোনো দুর্ঘটনা সংঘটিত না হয়, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।