Print Date & Time : 23 July 2025 Wednesday 8:57 pm

অগ্রযাত্রার উচ্চগতি অব্যাহত থাকুক

যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি, নেই বৃহৎ কোনো অবকাঠামো, কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, গুটিকয়েক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সেবা খাত গড়ে না ওঠা শুরুর গল্পটা অনেকটাই ছিল এ রকম। খুবই সাধারণভাবে যাত্রা শুরু করা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে হোঁচট খেয়েই পথ চলতে হয়। দারিদ্র্যপীড়িত ও শিক্ষাহীন জনগোষ্ঠী, সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগসহ নানা কারণে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের নেতিবাচক অভিধাও জোটে। বাংলাদেশ নিয়ে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীরও সংশয় ছিল, এ পরিস্থিতি থেকে আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, অনেক দেশের জন্য রোল মডেলও বটে।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনে পাঠকরা জেনেছেন, নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ২৯তম বৃহৎ অর্থনীতি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দোরগোড়ায় এসে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশও পেয়েছে। অথচ ১৯৭২ সালে এ অবস্থা ধারণার মধ্যেই ছিল না। 

বিশ্বব্যাংকের তথ্য উল্লেখপূর্বক খবরে বলা হয়, ১৯৭১ সালে আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৬২৯ কোটি। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫০ বছরে তথা সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের অর্থনীতির আকার বেড়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ গতি ধরে রাখা গেলে ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। এটি কঠিন হলেও অসম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সাফল্যের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আগামী ১৫-২০ বছর অন্তত আট-দশ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে এবং সব মানুষ যাতে প্রবৃদ্ধির সুফল ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্নীতি ও সামাজিক বৈষম্য কমাতে হবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চাকরির সুযোগ বাড়াতে হবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

উন্নত দেশ হলে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা কমে যাবে, ঋণ-অনুদানের শর্ত কঠিন হবে এবং সুদহার বাড়বে। বাণিজ্যসুবিধা বাড়াতে রপ্তানিপণ্যের বহুমুখীকরণসহ বাজার অন্বেষণ করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থনীতিও টেকসই হবে। তখন এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষ সুফল না পেলে মাথাপিছু আয় ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে পরিতোষ লাভ করার সুযোগ নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে উন্নয়নের বাইরে রাখলে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। জাতীয় সঞ্চয়ের হার বাড়িয়ে আর্থিক খাতে দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করতে হবে। যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান করতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান করতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। দেশের অর্থ পাচার ও লোপাটকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করা গেলে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। কাউকে বঞ্চিত করে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মানবাধিকারের পরিপন্থিও বটে।