অটো প্রমোশন বেকারত্বের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে

ইসরাত জাহান: ২৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যার্থী তালিকাভুক্তি অনুসারে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধিভুক্ত কলেজের তদারক করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাড়তি চাপে ছিল। সেই চাপ কমাতে ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর মান উন্নয়নে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য হলোÑ‘সব জ্ঞানীর উপরে আছেন এক মহাজ্ঞানী’। গাজীপুরের  বোর্ডবাজারে ১১ একর ৩৯ শতক জমির ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ২ হাজার ২৪৯টি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে অটো প্রমোশন কখনও যৌক্তিক হতে পারে না। মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অটো প্রমোশন এক নীরব ঘাতক। গত জুন মাসে পরীক্ষা ছাড়াই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তিন লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ; শর্ত ছিল করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শর্তসাপেক্ষে তৃতীয় বর্ষে প্রমোশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে পরীক্ষা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত ছিল যে, একজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দুটি বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা কতটুকু সম্ভব।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জরিপে উঠে এসেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বেকার থাকছেন। বিআইডিএস বলেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যারা বেকার থাকছেন, তাদের অধিকাংশই ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বাইরে অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করা। অর্থাৎ ব্যবসায় প্রশাসনে পড়া শিক্ষার্থীরাই তুলনামূলকভাবে বেশি চাকরি পাচ্ছেন। নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করা ক্ষেত্রেও ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। সরকারি গবেষণা সংস্থাটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জরিপটি পরিচালনা করে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ৫৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজের ২০১৭ সালে অনার্স (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর মুঠোফোনে জরিপটি করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা শ্রমশক্তিতে কতটুকু অবদান রাখছেন, তা জানতে এই জরিপ করা হয়েছে। জরিপের সমন্বয়ক ও বিআইডিএসের গবেষক মিনহাজ মাহমুদ বলেন, জরিপে উঠে এসেছে যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় শিক্ষার গুণগত মান ভালো নয়। তাই সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। এর সঙ্গে কলেজগুলোতে বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীকে অটো প্রমোশন দেওয়া, সেটা সেই শিক্ষার্থীর জীবনে কতটা অন্ধকার ডেকে নিয়ে আসতে পারে সেটা ভাবনার বাইরে। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পরও কেন আমাদের বেকার থাকতে হয়? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করাটাই কি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল? এই প্রশ্নগুলো আজ অনেক শিক্ষার্থীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বেকারত্ব হারের দিক থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থানের জন্য আজ কে দায়ী, শিক্ষার্থীরা নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানরত শিক্ষকরা অনেকে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন খুব বেশি না থাকায় আজ শিক্ষার্থীদের এই অবস্থা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করেন একজন শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যে পরিকল্পনা দরকার হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেই পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের জীবন পরিচালনা করে। কিন্তু এই জরিপ তাদের সব ভাবনাকে ভিন্নরূপ দিয়েছে। তারা বলে, তাদের জীবনে ব্যর্থতার যে ছায়া নেমে এসেছে সেটার জন্য একমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়?ী। একজন শিক্ষার্থীর আশার আলোকে না নিভিয়ে বরং সেই আলো কীভাবে আরও বেশি প্রজ্বলিত হয় সেই দিকটা চিন্তা করে অবশ্যই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এই বেকারত্বের হার নিরসনের জন্য।

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ

চট্টগ্রাম কলেজ