অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হোক

দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোয় অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে নীতিমালা জারির পর এবার তদারকির নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় বেসরকারি স্কুলগুলো নির্ধারিত টিউশন ফির বাইরে যেন অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে সে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারক করতে হবে। যেসব এলাকার কমিটি এখনও টিউশন ফি নির্ধারণ করেনি, সেসব এলাকার স্কুলকে আপাতত তা না নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী বলেই প্রতীয়মান। শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, অন্য কেউ নৈতিকতার চর্চা করুক বা না করুক; তাদের কাছ থেকে জাতি নৈতিকতা আশা করে। কারণ তারা মানুষ গড়ার কারিগর। আমাদের শিক্ষকদের দাবি, যথাযথ সম্মান পান না তারা। তারা আমাদের মনে করিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকদের ভিআইপি মর্যাদা দেয়া হয়; ফ্রান্সের আদালতে কেবল শিক্ষককে চেয়ারে বসতে দেয়া হয়; জাপানে সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা যায় না; চীনে সর্বোচ্চ মর্যাদা পান শিক্ষকেরা; কোরিয়ায় পরিচয়পত্র দেখালে মন্ত্রীদের সমান সুযোগ পান শিক্ষকেরা। অথচ বাংলাদেশে শিক্ষক পরিচয় দিলে অবহেলিত হতে হয়। সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করতে হয়।

বাংলাদেশে শিক্ষকরা অবহেলিত কি না, সেটি আলোচনার বিষয়। শিক্ষকেরা অবহেলার শিকার হওয়ার পেছনে দায় কার রাষ্ট্রের, জনগণের, নাকি শিক্ষকদেরই। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, দাবি আদায়ের জন্য সরকারের শেষ সময়কে বেছে নেন তারা। ক্ষমতাসীন দলও ভোট পাওয়ার আশায় তাদের আবদার মেনে নেয়। এবারও একই কৌশল নিয়েছেন তারা। আমাদের সামর্থ্য সীমিত, শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের সব দাবি পূরণ করা সম্ভবও নয়।

শিক্ষকদের মানতে হবেÑ নিজেদের কিছু কর্মকাণ্ডে হয়তো তাদের প্রতি আস্থা ও সম্মান কমছে। তাই বলে কেউ শিক্ষকদের অবহেলা করে, এটি সত্য নয়। শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কেন সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করবে। কেন তারা শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করবেন। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের এতই হিতাকাক্সক্ষী হবেন তাহলে ক্লাসে পাঠদানে অমনোযোগী কেন!
কেন পাবলিক পরীক্ষার আগে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ ও বকেয়া আদায়-সংক্রান্ত নিয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করতে হয়! কেন কোচিং, মডেল টেস্ট প্রভৃতির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়।

অনেক সময় দেখা যায়, সন্তান বা পোষ্যের কোনো ধরনের ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় অভিভাবকেরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না। তাই বলে কি অসন্তোষ নেই। রাজধানীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে শিক্ষকদেরই বোঝায়। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বা সরকারি অর্থ সহায়তা না নেয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবোর্ড ও মাউশির নজরদারিও তেমন নেই। এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন উদ্যোক্তা কাম শিক্ষকেরা। আমরা বিশ্বাস করি, নিজেদের কোনো কর্মকাণ্ডে শিক্ষদদের সুনাম হানি হয়; এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন তারা।