বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞা

অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে এনবিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম এবং করহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্ত সরকারকে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করবে। একইসঙ্গে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে সিগারেট ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী সিগারেট বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ দখলে থাকা নিম্ন এবং মধ্যমস্তরের সিগারেটকে একত্র করে সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করার পাশাপাশি অন্যান্য স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে রাজস্ব আয়ের এই সুযোগ হাতছাড়া হবে না এবং জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।

প্রজ্ঞা আরও জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে ষষ্ঠ বারের মতো বিড়ির মূল্য এবং ১০ম বারের মতো এর সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে; যা অত্যন্ত হতাশাজনক। জর্দা ও গুলের দাম এবং করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তামাক ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং নারী। মূল্যস্ফীতি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এসব পণ্য আরও সস্তা ও সহজলভ্য হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীরা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হবে এবং তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যাবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট প্রস্তুতকারকের নিট বিক্রয়মূল্যের ওপর অগ্রিম কর ৩ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকের সিগারেট পেপার আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো ইতিবাচক পদক্ষেপÑতবে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাকের কারণে দেশে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। তামাকবিরোধীদের কর সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত মৃত্যু কমবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকজনিত রোগে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তামাক সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা বাবদ যে খরচ হয়, তা তামাক খাত থেকে সরকারের আয়ের চেয়েও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে তামাকের দাম ও কর অপরিবর্তিত রাখা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তরুণ প্রজš§কে ধূমপানের মারাত্মক পরিণতি থেকে রক্ষা এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো আসন্ন বাজেটে সিগারেটের করহার বৃদ্ধির জোরালো দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, একটি কার্যকর ও সহজ তামাক কর নীতি প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি, যা একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য রক্ষা করবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডারকেও সমৃদ্ধ করবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।