প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়ায় সরকারি খাস জায়গা বহাল রেখে অধিগ্রহণ ছাড়াই ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বেড়িবাঁধের কার্যক্রম স্থগিত করে নকশা পরিবর্তন করার জন্য বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ‘সাঙ্গু নদীর ভাঙন থেকে প্রেমাশিয়া উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করতে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে পাউবো। বাঁধটি সাঙ্গু নদীর তীর ঘেঁষে সরকারি খাস জায়গায় সোজা হওয়ার কথা থাকলেও কোন কারণ ছাড়া হটাৎ এটি বাঁকা করে নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের মাছের প্রজেক্ট রক্ষা করতে গিয়ে বাঁধটি বাঁকা করে করা হচ্ছে। অধিগ্রহণ ও কোনরূপ অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার উপরই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।’
এদিকে বাঁধটির কারণে স্থানীয় আবুল কালাম, আবদু ছত্তার, আবদুল হাকিম, গিয়াস উদ্দীন, আবু নাছের ও আলমগীরের মালিকাধীন ৪ একর (দশ কানি) জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যক্তিরা বলছেন, বাঁধের কারণে তাদের ৪ একর জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোন রকম অনুমতি বা ক্ষতিপুরণ ছাড়া এসব বাঁধ নির্মাণ করছেন পাউবো। অথচ পাউবোর কাজের দায়িত্বে থাকা এসও গোলাম কাদেরের কাছে বিষয়টি জানার জন্য কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কৌশলে কথা না বলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’
পাউবো সূত্রে জানা যায়, ’খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া গ্রামের মৌলভীপাড়া এলাকায় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার একটি বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ৮০% কাজ শেষ। বাঁধ নির্মাণের কারণে ওই এলাকার ৩৬০ টি পরিবার সাঙ্গু নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় আলমগীর ও আবদু সাত্তার বলেন, ‘বাঁধটি সোজাসুজি না করে বাঁকা করে নির্মাণের ফলে মসজিদের আড়াই কানি জায়গাসহ আমাদের দশ কানি জায়গা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় এক আ. লীগ নেতাকে সুবিধা দিতে এই বাঁধের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপুরণ চাই।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হক বলেন, ‘পাউবোর নকশার কারণে স্থানীয়দের বেশ কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে এরকম নকশা ছিল না। নকশায় খালের জন্য একটি কালভার্ট করার কথা ছিল। কি কারণে নকশা পরিবর্তন করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানিনা।’
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার ফারুক বলেন, ‘প্রকল্পটি পাশ হওয়ার সময় নকশা এরকম ছিল না। মূলত স্থানীয় এক আ.লীগ নেতার মাছের প্রজেক্ট রক্ষা করতে পাউবোর কর্মকর্তারা নকশা পরিবর্তন করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করছেন। যা স্থানীয়দের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে পাউবোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও আমরা কথা বলতে পারিনি। কৌশলে আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছেন পাউবোর কর্মকর্তারা।’
পাউবোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, ‘এক বছর আগে সাবেক এমপির অনুরোধে এ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজ শুরুর সময় আমরা এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেছিলাম। তখন কারো কোন আপত্তি ছিল না। এখানে পাউবোর ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। বাঁধ হলে এলাকার জনগণ উপকৃত হবে। জনগণের ক্ষতি হয় এ ধরনের কোনো প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করবে না।’
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদুল আলম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলার দায়িত্বরত পাউবো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ যাচাই বাছাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’