Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 8:04 pm

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পুরোনো মূল্যবান বইপত্র বিক্রির অভিযোগ

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী): নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের গ্রন্থাগারের বিপুল পরিমাণ পুরোনো মূল্যবান বইপত্র গোপনে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজটি স্থাপিত হয়। পরে ১৯৭৭ সালে এটিকে কলেজে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে শুধু বিজ্ঞান শাখায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। একসময় প্রতিষ্ঠানটিতে কারিগরি অঙ্কন শিক্ষা (জ্যাকা), লোহা-লক্কড়সহ বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে পাঠদান করা হতো। ফলে সে সময় কলেজটির নামকরণ ছিল সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়। কিন্তু পরে কারিগরি বিষয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০২০ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ করা হয়েছে।

প্রাচীনতম ও স্বনামখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গ্রন্থাগারে অনেক পুরোনো মূল্যবান বইপত্র ছিল। আর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা আহরণের প্রয়োজনে গ্রন্থাগারের মূল্যবান বইপত্র সংগ্রহ করে অনেক বিষয়ে উপকৃত হয়ে আসছিল। এ অবস্থায় গত ২৩ জুন বিকালে কলেজের গ্রন্থাগারের বিপুল পরিমাণ পুরোনো মূল্যবান বইপত্র অনেকটাই গোপনে বিক্রি করে দেন অধ্যক্ষ।

উপজেলার কামারপুকুর এলাকার পুরোনো কাগজ ব্যবসায়ী মো. আখতারুল ইসলামের কাছে এক হাজার কেজিরও বেশি পরিমাণ বইপত্র বিক্রি করা হয়। আর ৩০ টাকা কেজি দরে কেনা ওই বইপত্রগুলো একটি পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যান ওই পুরোনো কাগজ ব্যবসায়ী। পরে গ্রন্থাগারের বই বিক্রির বিষয়টি চাউর হয়। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরোনো বইপত্র বিক্রির আগে শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নেয়ার কথা। কিন্তু সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের গ্রন্থাগারের পুরোনো মূল্যবান বইপত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো রকম সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। তড়িঘড়ি করে অতি গোপনে বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে। বই বিক্রির টাকা কলেজের সরকারি তহবিলেও জমা করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক তার পছন্দের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাধ্যমে অতি গোপনে বইগুলো বিক্রি করে পুরো টাকা পকেটস্থ করেন। এ নিয়ে কথা হলে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক ইবনে ফজল প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারের ৮৫০ কেজি পুরোনো বই বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে উল্লিখিত পরিমাণ বই ১৮ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে কথা হয় এ প্রতিনিধির। এ সময় অধ্যক্ষ গ্রন্থাগারের পুরোনো বই বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তবে বিক্রি করা বইয়ের পরিমাণ জানাতে পারেননি অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, গ্রন্থাগারের জন্য নতুন বইপত্র কেনার উদ্দেশ্যে পুরোনো সিলেবাসের ও নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু বইপত্র বিক্রি করে দেয়া হয়। আর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত অভ্যন্তরীণ একটি কমিটির মাধ্যমে বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই কমিটির আহ্বায়ক কিংবা সদস্যদের নাম বলতে পারেননি। আর তিনি সরকারি নিয়মনীতি মেনে বই বিক্রি না করার জন্য নিজের ভুল স্বীকার করেন। ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না বলে জানান তিনি।