ঢাকার সাভারে অনুমোদনহীন সিলিন্ডার মজুত ও রিফিল কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় শিশুসহ পাঁচজন দগ্ধ হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজ কড়চায়। প্রতিবেদনের তথ্য, ওই কারখানায় খালি গ্যাসসিলিন্ডারে বড় সিলিন্ডার থেকে বালু ও পানি মিশ্রণ করে গ্যাস রিফিল করা হতো। রিফিল করার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে কারখানার মালিকসহ পাঁচজন দগ্ধ হন। আরেক রিফিল সিলিন্ডার ব্যবসায়ী জানান, ওই এলাকায় ৪০-৫০টি এমন কারখানা রয়েছে। এর আগে গত ৪ মে আরেক কারখানায় বিস্ফোরণে ২ জন দগ্ধ হন। তার ভাষ্য, কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই সিলিন্ডার মজুত করে রিফিল করা হয়। তারা কেবল সিলিন্ডার বিক্রির লাইসেন্স নিয়েছেন।
নি¤œমানের সিলিন্ডার (এলপিজি বা সিএনজি) বিস্ফোরণে প্রাণহানি হয়, সম্পদেরও ক্ষতি ঘটে। সারাদেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও প্রায়ই গণমাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনার খবর আসে।
গ্যাস অপরিহার্য পণ্য। যেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগ নেই, সেসব এলাকায় বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাসই ব্যবহƒত হয়। আবাসিক পর্যায়ে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তাই মানসম্পন্ন সিলিন্ডার সরবরাহ নিশ্চিত করাটা জরুরি। ঠিক এ সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, মানহীন সিলিন্ডার বিক্রির বিষয় আমাদের হতাশ করে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান গ্যাস সিলিন্ডার রিফিল করে, বাজারজাত করে। অনিরাপদ গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান বেড়ে চলেছেÑএমন খবর দুশ্চিন্তার বৈকি। কারণ এসব দোকানের সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন নেই।
ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডারে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব কারণে কোনো বিদেশি কোম্পানি এখন পর্যন্ত দেশে তৈরি সিলিন্ডার ব্যবহার করে না। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এলপিজিসিএলও আমদানি করা সিলিন্ডার ব্যবহার করে। গ্যাস সিলিন্ডার ত্রুটিপূর্ণ মানেই জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিপিসি ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার বাতিল করেছে; কিন্তু সাধারণ ভোক্তার কাছে এমন সিলিন্ডার বিক্রি না হওয়ার বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না, সেটি এক বড় প্রশ্ন।
বাতাসের চেয়ে ভারী হওয়ায় সিলিন্ডারে ত্রুটি থাকলে পণ্যটি বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আগুনের সংস্পর্শে আসামাত্রই বিস্ফোরণ ঘটায়। নিয়ম মেনে রক্ষণাবেক্ষণ হলে প্রতিটি সিলিন্ডার নাকি ৪০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। ১০ বছর অন্তর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সিলিন্ডার রি-টেস্ট করাতে হয়। এতে উত্তীর্ণ হলেই পরবর্তী ১০ বছর ব্যবহারের অনুমোদন পায় উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। অথচ ত্রুটিপূর্ণ, মেয়াদোত্তীর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত সিলিন্ডারের গ্যাস রিফিলের ব্যবসা চলছে প্রকাশ্যেই।
অবস্থার উত্তরণে সারাদেশের ত্রুটিপূর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত দ্রুত সেগুলো বাজার থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যত্রতত্র মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ করতে হবে; বন্ধ করতে হবে অননুমোদিত রিফিল কারখানাগুলো। গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। আশা করি, গ্যাস সিলিন্ডার তৈরি, বাজারজাত, রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।