শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সঠিক পথে রয়েছে ফিলিপাইন। এমনকি অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও সঠিক পথে রয়েছে দেশটির অর্থনীতি। পাসায় সিটিতে অনুষ্ঠিত ১১তম আরাংকাদা ফিলিপাইন্স ফোরামে দেয়া এক ভাষণে এ কথা বলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ আর. মার্কোস জুনিয়র।
গত নভেম্বরে ফিলিপাইনে মূল্যস্ফীতি বাড়ে আট শতাংশ। মার্কোস বলেন, সরকার অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করছে এবং আমরা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছি।
ফিলিপাইনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সঠিক পথে থাকলেও তার মতে, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’ তিনি বলেন, আমরা পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যে দেখেছি, নভেম্বরে এর আগের মাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা দুঃখজনক।
ফিলিপাইন স্ট্যাটিসটিকস অথরিটির (পিএসএ) সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা নভেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় আট শতাংশে। এ হিসাবে ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। তখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ১ শতাংশে। পিএসএ’র কর্মকর্তা দিভিনা গ্রেসিয়া ডেল প্রাডো এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা করেন।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে এক বছর আগের চেয়ে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক ছয় শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শূন্য দশমিক এক শতাংশ সংকোচনের পর জিডিপি বেড়েছে দুই দশমিক নয় শতাংশ, ধারণা করা হচ্ছে পরের প্রান্তিকে আরও এক শতাংশ বাড়বে। আমদানি ব্যয় বাড়ায় দুর্বল হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা পেসো। গত অক্টোবরে ফিলিপাইনের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়। তাছাড়া দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক ধাপে সুদের হার বাড়িয়েছে। মূলত কভিড মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্র করে দেশে দেশে লাফিয়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এর বাইরে নয় ফিলিপাইনও। এসব কারণে দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
তাই মার্কোস এক বিবৃতিতে বলেন, আমদানিসহ যেসব খাত মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে চলেছে, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ আমদানি। সুতরাং আবার বলতে চাই, রিজার্ভ ঠিক রাখতে আমদানি কমাতে চাই, যাতে মূল্যস্ফীতির হারও কমে।
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করা প্রসঙ্গে মার্কোস জানিয়েছেন, তার প্রশাসন বিভিন্ন চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে। কারণ বেসরকারি খাত দেশটির অর্থনীতি চাঙা রেখেছে। তিনি বলেন, আমি সাফল্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে স্থানীয় ও বিদেশি উভয় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দিয়েছি। তাই আমাদের অবশ্যই চেম্বার অব কমার্স, বেসরকারি খাত ও সরকারের মধ্যে এ অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে হবে।
এজন্য তিনি দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী নেতাদের শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফিলিপাইনের অর্থনীতিকে রূপান্তর করার প্রচেষ্টায় সরকারকে সহায়তা করার জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিই তার মূল্য লক্ষ্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তিনি পর্যটন খাত থেকে সব বিধিনিষেধ তুলে নিতে চান, অর্থনৈতিক সংস্কার চান এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চান।
তিনি বলেন, সরকার ব্যবসা পরিচালনার জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা বাড়াচ্ছে। ফিলিপাইনকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি কার্যকর ও টেকসই গন্তব্যে পরিণত করতে সরকার ঐক্যবদ্ধ।
উপরন্তু মার্কোস প্রশাসন উৎপাদন খাতের সক্ষমতা বাড়াতে চেষ্টা করছে। তারা রপ্তানিনির্ভর শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে। এ খাতের উন্নয়নে স্থানীয় বাজারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ খাতটি দেশটির অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।