Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 7:20 pm

অনিয়ম-অস্বচ্ছতা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও অর্থ ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কমিশন, যা আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কমিশন থেকে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, রেকর্ডপত্র এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র যাচাই করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন বিএসইসির উপপরিচালক মো. রফিকুন্নবী, সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক এবং সহকারী পরিচালক মো. রায়হান কবির।

কমিটি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা পরিদর্শন করবে, যেখানে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে কিনা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম বা অস্বচ্ছতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে। এছাড়া কোম্পানির মূলধন ব্যবহারের খাত-যেমন ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ও বিএমআরই বাবদ অর্থ ব্যবহার, সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা বিশ্লেষণ করবে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ বিএসইসির জারি করা সম্মতিপত্রে বর্ণিত শর্তগুলো যথাযথভাবে মানা হয়েছে কি না তা যাচাই করবে।

কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের জন্য ২০২৩ সালে ১০ টাকা দরে এক কোটি নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা তুলেছে। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল এবং ৫ কোটি টাকা বিএমআরই খাতে ব্যয় করার কথা ছিল। তবে সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি ৬২ দশমিক ২১ শতাংশ অর্থ অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি বিস্তারিত অনুসন্ধান করবে।

তদন্ত কমিটি আরও দেখবে, মূলধন সংগ্রহের ঘোষণায় কোনো ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে কি না এবং সংশোধন আনলে তা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া করা হয়েছে কি না। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মূলধন ব্যবহারের অডিটরের মতামত আছে কি না তা-ও যাচাই করা হবে। কোম্পানির ২০২৩ ও ২০২৪ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো গরমিল রয়েছে কি না এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়নি সে বিষয়েও খতিয়ে দেখবে কমিটি। উভয় হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) মাত্র ০.০২ টাকা হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৫৬ টাকা। ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাথমিকভাবে ভালো সম্ভাবনা দেখালেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া কোম্পানিটি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। এ কারণে ২০০৯ সালে বিএসইসি কোম্পানিটিকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওটিসি মার্কেটে পাঠায়। এরপর কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে কার্যত বন্ধ অবস্থায় ছিল। সম্প্রতি ইউনুস গ্রুপ কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে এবং পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। বর্তমানে পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুল হাসান, পরিচালক মাহফুজা ইউনুস এবং দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক।

২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করলেও এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানির চার পরিচালক শেয়ারপ্রতি ২৫০ টাকা দরে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দেন, যা নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

বিএসইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘কমিশন সাধারণ বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে কোম্পানিটির সব কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তদন্তে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০-এর বিধি ১৭ অনুযায়ী কমিশন এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তদন্ত শেষে কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় দুটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে দাখিল করতে হবে। কমিশন মনে করছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার জন্য কোম্পানিটির আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি।

প্রসঙ্গত, পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের জনপ্রিয় পণ্য ‘ম্যানোলা’ আশির দশকে বাংলাদেশের প্রসাধনীর বাজারে বেশ সাড়া ফেলেছিল। সেই ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কোম্পানিটি একসময় ব্যবসায়িক প্রসার ঘটিয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।