অনুনোমোদিত ভবন নির্মাণ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

নতুন অর্থবছরে বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার চলমান বিশেষ সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুবিধা বলবৎ থাকছে। পুঁজিবাজার, আবাসন ও শিল্প খাতে বিনিয়োগের স্বার্থে কালোটাকা বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ আবারও দেয়া হয়েছে। আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট বা প্লটে আগের নিয়মে কর দিতে হবে। এ নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না।

বাববার কালোটাকা সাদা করার এমন সুযোগদান ভালো করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। তবুও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবাসনকে এগিয়ে নিতে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু কেন জানি আবাসন ব্যবসায়ীরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করেছেন। তারা ভবন নির্মাণে কেবলই আইন অমান্য করে চলেছেন। যখনই কোথাও কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা, ভবনধস, কাত হয়ে পড়া, ফাটল দেখা দেয়ার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে, তখনই জানা যায় ‘আইন মেনে ভবন নির্মাণ করা হয়নি’।

গতকাল শেয়ার বিজে ‘চট্টগ্রামের স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেড: ছয়তলার অনুমোদনে ১২ তলা ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন আবাসন ব্যবসায়ীদের উদাসীনতা নতুন করে সামনে এনেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্যানমারের ‘স্যানমার গ্রানডি’ চট্টগ্রাম মহানগরের অভিজাত এলাকা উত্তর খুলশির নির্মীয়মাণ ভবন। ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বহুতল ভবন নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্রায় ৬০ ফুট পাহাড় কাটার অভিযোগও রয়েছে স্যানমারের বিরুদ্ধে। আবার ১২ ফুট প্রশস্ত সড়ককে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ২০ ফুট সড়ক দেখিয়ে তারা দ্বিতীয়বারের মতো অনুমোদনের জন্য তদবিরও করছে।

প্রায়ই নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করা হয়। আমরা মনে করি, ভবন তৈরির পর ভেঙে ফেলার চেয়ে নির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করা গেলে দুর্ঘটনা কমবে। মহানগর এলাকায় ভবন নির্মাণে কয়েকটি সংস্থা-কর্তৃপক্ষ অনুমোদন ও তদারকি করে থাকে। আলোচ্য ভবনের অনুনোমোদিত নির্মাণকাজের জন্য স্যানমারের সঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কয়েকটি সংস্থা দায় এড়াতে পারে না।

সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, কখনও ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা ভবন নির্মাণ করা যাবে না। এমন প্রকল্প নজরে এলে অতিরিক্ত অংশ ভেঙে দেয়া হবে। এছাড়া ১২ ফুট রাস্তায় ছয়তলার বেশি অনুমোদন দেয় না সিডিএ; এর অতিরিক্ত করলে সেটা বেআইনি। স্যানমারকে আবাসন খাতের বড় প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু একাধিক অনিয়মের খবর রয়েছে প্রতিবেদনে। ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণের পরই তো নির্মাণ বন্ধ হওয়ার কথা। কেন তা বন্ধ হয়নি, সে প্রশ্নও উঠতে পারে। স্যানমারের মতো ‘বড় প্রতিষ্ঠান’ কার প্রশ্রয়ে আইন অমান্য করছে, তাও খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের ইমারত নির্মাণ বিধি এবং অন্য আইনগুলো যুগোপযোগী কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে থাকা সংস্থার উদাসীনতা কিংবা দুর্নীতির কারণে নগরবাসী বিশেষ করে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে লক্ষ্যে অনুনোমোদিত ভবন নির্মাণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।