মুহাম্মদ ফয়সুল আলম: বিশ্বের অন্যান্য কল্যাণ রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশ সরকারও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে দেশের দুঃসহ, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত এতিম, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাপক ও বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫, ১৭, ২০ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অন্য নাগরিকদের সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমসুযোগ ও অধিকার দেয়া হয়েছে। তাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যেসব শিশুর দৈহিক, মানসিক ত্রুটির কারণে নির্দিষ্ট মাত্রায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অক্ষম, তাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন) বলে। অর্থাৎ যেসব শিশুর দৈহিক বা মানসিক দিক থেকে স্বাভাবিক বা গড় শিশুদের বিচারে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়, তাদের বলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন।
আমাদের দেশে বহু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে: শ্রবণ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, দৃষ্টি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, বাক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, বুদ্ধি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও শারীরিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। এছাড়া অটিস্টিক ব্যক্তিবর্গ এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। সেই হিসেবে বিশ্বের ১০০ কোটিরও অধিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯ কোটি ৩০ লাখ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৯ শতাংশ। বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কত তা নিয়ে এখনও পরিপূর্ণ জরিপ হয়নি। তবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে পুরুষ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সংখ্যা ৯ লাখ ৮১ হাজার ৭৪১ জন এবং নারী বিশেষ চাহিদাসম্পন্নর সংখ্যা ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৯ জন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ২ কোটির বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন।
পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী সবাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। সমাজের বাকি সদস্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা থাকলেও তারা সব অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই তারা হয় বৈষম্যের শিকার। এ বৈষম্যই তাদের সমাজ থেকে ধীরে ধীরে দূরে ঠেলে দেয়। এর ফলে তারা সমাজের বাকি দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। তাদের অবহেলায় পেছনে ফেলে রেখে সমাজ এগিয়ে যাবে, তা কখনোই সম্ভব নয়। সমাজের অংশ হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা সমাজের বোঝা নয় বরং সম্পদে পরিণত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়নে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। প্রতিবন্ধিত্ব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে সমাজে এখনও কিছু নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের শিক্ষার হার বাড়লেও বেকারত্ব সেই অর্থে কমছে না। অনেক পরিবারে তাদের বোঝা হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে খুব দক্ষ হয়ে থাকে। তাই তাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হিসেবে চিহ্নিত না করেও বিশেষ শিশু হিসেবে দেখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৮ সালে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা সমাজের বোঝা নয়। এদের সুপ্ত প্রতিভা আছে। তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলে তারা আমাদের সম্পদ হবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সুস্থরা পারে না, কিন্তু বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা আমাদের অলিম্পিকের স্বর্ণ এনে দেয়। তাই তারা আমাদের সম্পদ। তাদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের কাজ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও অটিজম শিশুদের নিয়ে এখন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘও এখন এ বিষয়ে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এসব শিশুকে নিয়ে। এই শিশুরা যেন জš§ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করছে সরকার। তাই সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা যে আমাদের জন্য বোঝা নয় সম্পদ হতে পারে, তা বিভিন্ন দেশে যেমন উদাহরণ আছে, ঠিক তেমনি আমাদের দেশে অহরহ প্রমাণ আছে। একটা সময় ছিল যখন প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে পরিবার এবং সমাজ অনেক চিন্তিত থাকত এখন আর তেমনটা নেই। কারণ এখন বাংলাদেশ সরকার দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে, তাদের প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হচ্ছে, তাদের সরকারিভাবে ফ্রি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা কর্ম করে খেতে পারে; এ ছাড়া সরকার তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে সেই আলোকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সরকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দারিদ্র্য অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু- কিশোরদের শিক্ষা লাভের সহায়তা হিসেবে সরকার ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ‘শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান’ কর্মসূচি প্রবর্তন করেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শুরুতে ১২ হাজার ২০৯ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। শুরুতে এ কর্মসূচির আওতায় মাসিক উপবৃত্তির হার ছিল প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১ হাজার টাকা। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় অর্থাৎ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজর ৪১ জন এবং বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৫০ জনে এবং বার্ষিক বরাদ্দ ৬ কোটি টাকা থেকে ৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৬২০ জনে এবং বার্ষিক বরাদ্দ ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ জনের জন্য বরাদ্দ ৯৫.৬৪ কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে।
সরকার ২০০৫-০৬ অর্থবছর হতে অসচ্ছল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করেন। শুরুতে ১ লাখ ৪ হাজার ১৬৬ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লাখ জন এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ হিসেবে বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৬০ কোটি টাকা। বর্তমানে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮ হাজার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিবিড় তদারকি এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে অসচ্ছল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভাতা বিতরণে প্রায় শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভাতা কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো, বিদ্যমান বাস্তবায়ন নীতিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগীকরণ, উপকারভোগী নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ, ডেটাবেজ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০ টাকার বিনিময়ে সব ভাতাভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতার অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
সরকার ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ‘এতিম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করে। এসব কেন্দ্রে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী এতিম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা সময়োপযোগী বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন হওয়ার সুযোগ লাভ করছে। ফলে তারা সমাজ ও পরিবারের বোঝা ও করুণার পাত্র না হয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। প্রশিক্ষণার্থীদের চাকরি ও স্ব-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দেশের ৬ বিভাগে ৬টি নি¤œবর্ণিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো শিবগঞ্জ, বগুড়া; আশাশুনি, সাতক্ষীরা; সদর, পটুয়াখালী সদর, মৌলভীবাজার; শিবচর, মাদারীপুর; দাউদকান্দি, কুমিল্লা প্রভৃতি। এই কেন্দ্রগুলোর প্রতিটির আসনসংখ্যা হলো ১০০টি।
সরকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সুরক্ষা আইন, ২০১৩ পাস করেছে। এ আইন অনুযায়ী, কোনো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির সম্পদ আত্মসাৎ করলে এবং প্রকাশনা ও গণমাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করলে, তা দণ্ডণীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি অসত্য ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে নিবন্ধিত হলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানাযোগ্য অপরাধে দণ্ডিত হবেন। আর কোনো ব্যক্তি জালিয়াতির মাধ্যমে পরিচয়পত্র তৈরি করলে তার সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য ১৯৯৯ সালে জাতীয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন করে তৎকালীন সরকার। বর্তমানে এ ফাউন্ডেশনকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উন্নয়ন অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে একটি করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কর্মজীবী পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল, অটিজম রিসোর্স সেন্টার ও অটিস্টিক স্কুল চালু করা হয়েছে। ফাউন্ডেশন থেকে ইশারা ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রবণ, বুদ্ধি ও দৃষ্টি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। দেশের ৭৪টি বুদ্ধি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বিদ্যালয়ের মাধ্যমে বুদ্ধি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সমন্বিত বিশেষ কর্মকাণ্ডের ফলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন স্কুলগুলোয় সার্বিক কর্মকাণ্ড আগের তুলনায় অনেক বেশি গতি সঞ্চার হয়েছে। অটিস্টিক ও বুদ্ধিবিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর মা-বাবা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। বিশেষ করে তাদের অবর্তমানে এই শিশুরা তাদের সম্পদের ব্যবস্থাপনা কীভাবে করবে তা নিয়ে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য অটিস্টিক ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩-এর মাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা তাদের অর্থ সম্পদ নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে পাঁচ শতাংশ কোটা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর কল্যাণে জাতীয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের চিকিৎসা সেবা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সময়কালে দেশে ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় সর্বমোট ১০৩টি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হাসপাতাল নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এসব কেন্দ্রে ফিজিওথেরাপি, ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপি, ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপি, ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপির মাধ্যমে অটিজমের শিকার শিশু ও ব্যক্তি এবং অন্যান্য ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিনামূল্যে নিয়মিত থেরাপি সেবা, হিয়ারিং টেস্ট, ভিজুয়াল টেস্ট, কাউন্সেলিং, প্রশিক্ষণ সেবা এবং বিনামূল্যে সহায়ক উপকরণ হিসেবে কৃত্রিম অঙ্গ, হুইলচেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ক্র্যাচ, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম, সাদাছড়ি, এলবো ক্র্যাচ প্রভৃতি বিশেষ চাহিদাসম্পন এবং আয়বর্ধক উপকরণ হিসেবে সেলাইমেশিন দেয়া হচ্ছে। উক্ত কেন্দ্রসমূহের মাধ্যমে শুরু থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ৫ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ জন ও মোট প্রদত্ত সেবা সংখ্যা (ঝবৎারপব ঞৎধহংধপঃরড়হ) ৭৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫১টি। এ পর্যন্ত কৃত্রিম অঙ্গ, হুইলচেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ক্রাচ, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম, সাদাছড়ি, এলবো ক্র্যাচ, আয়বর্ধক উপকরণ হিসেবে সেলাইমেশিনসহ মোট ৪৫ হাজার ৫৪৩টি সহায়ক উপকরণ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সমাজের বোঝা নয়, ওরা আমাদেরই সন্তান। সরকারের পাশাপাশি সবাই একটু সচেতন হলে তারা আর পিছিয়ে থাকবে না। দেশের সমৃদ্ধি আনয়নে অবদান রাখবে। একজন সাধারণ মানুষের মতো যথার্থ সুযোগ এবং গুরুত্ব দিলে তারাও দেশের জন্য অনেক সম্মান বয়ে আনতে পারবে এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারবে। এতে বৃদ্ধি পাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা। সম্ভব হবে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ।
পিআইডি নিবন্ধ