অপচয় বন্ধে জনসচেতনতা

সময় ও অর্থ মানব জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা এ দুটিরই বেশি অপচয় করি। সময় চলে যায়, বসে থাকার অবকাশ কোনোই তার। কিন্তু আমরা অনেকেই সময়ের কাজ সময়ে করতে ব্যর্থ হই। সময়কে মূল্য দিই না বলেই কঠিন সময় এসে আমাদের চারদিকে থেকে ঘিরে ধরে। কোনোভাবে একবার যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকে যাওয়া যায়, কখন যে ৮টা থেকে সময় ৯টার কাটায় এসে দাঁড়ালÑসেদিকে হুসই থাকে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে যে চলে যায় চ্যাটিং করে করে। অথচ ফোনে একটা বই পড়তে আমাদের যেন প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থা হয়ে যায়। একবারও ভাবা হয় না, আজকের সকালটি কিংবা বিকালটি আর কি কোনো দিন ফিরে আসবে? কাজেই আমাদের উচিত সময়ে সঠিক ব্যবহার করা।

আমরা এতটাই স্মার্টফোনে আসক্তি হয়ে পড়ছি যে আমাদের সময়জ্ঞানই লোপ পেতে বসেছে। অন্যদিকে টাকার অপচয়ও কি কম করি আমরা? হাতে টাকা এলেই আর শেষ করে দেয়ার তর সয় না! এক টাকার জায়গায় খরচ করে বসি দশ টাকা।

আগে কারও পড়ার টেবিলে গেলেই চোখে পড়তো সময় ভাগ করে তৈরি করা পড়ার রুটিন কিংবা ডেইলি রুটিন। এখনো আছে। কিন্তু সময়ের কাজটি করা হয় না সময়ে। পড়ার টেবিলে নিয়ে যাই নিজের স্মার্টফোনটি। রুটিনের প্রথম বইটি যখন পড়তে হাতে নেই অমনিই ম্যাসেঞ্জারে টুং শব্দ। আর কি বসে মন পড়ার টেবিল! মন তো আনচান করে ফোনে হাত দিতে। যদি একবার হাত পড়েই যায় ফোনে, তাহলে কি আর কমপ্লিট করা যায় রুটিন কিংবা মেইনটেইন হয় রুটিন? ম্যাসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করতে করতে রুটিনের তিনটি বিষয় পড়ার সময় শেষ। অথচ পড়া হলো না একটি শব্দও। এভাবে সময় চলে যায় কিন্তু মানা হয় না রুটিন। রুটিন যেন থেকেও নেই। সময়ের অপব্যবহার কখনও কাম্য নয়।

আজ তো করা হলো না কাজটা, আগামীকাল করব। এভাবে কত আগামীকাল আসে কিন্তু আমাদের কাজই শুরু হয় না করা। অন্যদিকে সময়ের সুষ্ঠু ও সদ্ব্যবহার না থাকায় অনেকেই পিছিয়ে পড়েন। নিজেকে স্বাবলম্বী কিংবা অর্থিকভাবে সচ্ছল করতে ব্যর্থ হন। সময়ের কাজটা যথাসময়ে করে ফেললে আর কাজের পাহাড়ও ঘাড়ে চেপে বসে না আমাদের। আবার টাকার অপচয় না করলেও অর্থ সংকটে পড়তে হয় না। সময় আর টাকাই নয় আমরা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোও দেদার অপচয় করে থাকি। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির অপচয় অহরহ। ঘরে নেই কেউ অথচ ফ্যান বাতি অন করা। শুধু শুধু গ্যাসের চুলা জ্বলতে দেখা যায় অনেক বাসায়।

লাইনের গ্যাস, কী সমস্যা এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে নিজের মধ্যে। পানি পেতে তো টাকা লাগে না। তাই বলে আমরা এগুলোর যথেচ্ছা ব্যবহার করব? বিশুদ্ধ পানির সংকট কতটা কষ্টের উপকূলবাসীরা তা বোঝেন। আমরা বুঝি না। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, অর্থ, সময় প্রত্যেকটা জিনিসই আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিজের কাছেই অঙ্গীকার করতে হবে যে, কোনো কিছ–রই অপচয় করব না।

মারুফ হোসেন

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়