দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী থেকে অবাধে বালি উত্তোলনের খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, বালিমহাল ঘোষণা করা হয়নি, এমন এলাকা থেকে বালি তুলে চলছে কোটি কোটি টাকার বালির ব্যবসা। কথিত বালিমহালের ইজারাদারদের দাবি সরকারি আইনকানুন মেনে বৈধভাবে ব্যবসা করেন তারা। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে দণ্ডিত হন তারা।
কয়লা বা সোনা উত্তোলনের চেয়ে বালি উত্তোলনের নেতিবাচক প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। উন্নত-উন্নয়নশীল সব দেশেই বালি উত্তোলন হয়। বালি উত্তোলনের ইতিবাচক দিকও রয়েছে। দুঃখজনক হলোÑবালি উত্তোলন আমাদের দেশে কখনোই ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি, কেননা অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে।
বালি তোলার ফলে উত্তোলনের স্থান, আয়তন, সময়, অন্যান্য খনি, সংশ্লিষ্ট এলাকার জীববৈচিত্র্য ও উত্তোলনের প্রাযুক্তিক ব্যবস্থাসহ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। সামুদ্রিক বালি উত্তোলন নিয়ন্ত্রণেও বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের আইন রয়েছে। দেশে অবৈধ বালি উত্তোলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রশ্রয় রয়েছে বলে বহু অভিযোগ রয়েছে। নইলে আইন থাকার পরও নির্বিচারে বালি উত্তোলন চলে কীভাবে। রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, নদী দখলদারদের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি আছে। মেঘনার অবৈধ বালি উত্তোলনে একজন নারী মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তিনি বলেন, মেঘনা থেকে এক ব্যক্তি ৬৬৮ কোটি ঘনফুট বালি চুরি করেছেন। ওই বালির আর্থিক মূল্য ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। তাকে ২৬৭ কোটি টাকা রয়্যালটি দেয়ার কথা বলে তার চুরিকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে নদী নিজেই পথ খুঁজে নেয়। তখন তীরবর্তী এলাকার মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন; দেশ ও জাতিকে অনেক মাশুল দিতে হয়। নদীশাসনে দেশকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ খরচ করতে হয়। আবার ভাঙন প্রতিরোধেও খরচ করতে হয়। বালি অবশ্যই উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু তা করতে হবে নিয়মনীতি মেনে। নিয়মনীতি যথানিয়মে পরিপালিত হলে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন এবং জলাশয় অপদখল বন্ধ করা সম্ভব হবে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হলে অনেক সময় প্রশাসনও তা না দেখার ভান করে। যখন একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তখন জেলা প্রশাসনের করার কী থাকতে পারে। অনেকের মনে আছে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় মেঘনার চরে প্রায় সাড়ে ৪৮ একর সরকারি খাসজমি উদ্ধার ও দলিল বাতিলের জন্য সরকারের পক্ষে মামলা করেন ডিসি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো মামলা হলে আইন অনুযায়ী সেটির বাদী হন ডিসি। চাঁদপুরে মামলা করায় পরবর্তী সময় জেলা থেকেই চলে যেতে হয় ডিসিকে। এতেই প্রতীয়মান হয় দখলদাররা আরও প্রভাবশালী।
নদী থেকে যারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করেন, কিংবা নদীতীরবর্তী জলাশয় ভরাট করেন, তাদের রুখতে রাষ্ট্রকে শূন্য সহনশীলতায় ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্র কঠোর না হলে বালি উত্তোলন ও ভরাট সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয়।