Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 8:09 pm

অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানায় বন্ধ হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ

ইসমাইল আলী: পরিকল্পিত শিল্পায়নে দেশের যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন নিরুৎসাহিত করছে সরকার। এ জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও বিসিক শিল্প এলাকা। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ৬৫টি শিল্পহাব চিহ্নিত করেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব শিল্পহাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিতরণকারী সংস্থা ও কোম্পানিগুলো নিবিড় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ফলে ক্যাপটিভ বা কমার্শিয়াল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি বন্ধ করা দরকার। এজন্য ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট ১০ মেগাওয়াট বা তার ওপরে হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনাপত্তি নিতে হবে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে ক্যাপটিভ জেনারেশন চালু রাখার বিষয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সভায় জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিভাগ পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনায় দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদাসহ সমগ্র দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ক্রমবর্ধমান হারকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। কাজেই এখন যদি শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয় বা ক্যাপটিভ পাওয়ারকে উৎসাহিত করা হয়, তবে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক উৎপাদিত বিদ্যুতের যথাযথ ব্যবহার হবে না। ফলে সরকারের বিশাল আর্থিক ক্ষতি হবে।

সভায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ক্যাপটিভ ও কমার্শিয়াল পাওয়ার প্লান্টগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। যতদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না হবে, ততদিন ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট চালু রাখতে হবে। তবে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাসের অপচয় বেশি। তাই ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র ১০ মেগাওয়াট বা তার বেশি হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনাপত্তি নিতে হবে।

এদিকে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ২০০৮ সালে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করায় বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) স্থাপনের পাশাপাশি কমার্শিয়াল পাওয়ার প্লান্টের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ওই নীতিমালায় ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনে গ্যাস ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। যদিও পরে তা পরিবর্তন করা হয়।

তিনি জানান, বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক প্রায় দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে, যার জন্য গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট। এক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, ক্যাপটিভে ব্যবহƒত ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎ খাতে স্থানান্তর করা হলে গ্রিড বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৬৭ পয়সা কমানো সম্ভব। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় কমানো সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পিতভাবে শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।’

এদিকে সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) অর্থনৈতিক জোন শিল্প এলাকায় পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের জন্য প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে। ফলে বরাদ্দপ্রাপ্তরা গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বার্ক) কাছ থেকে কমার্শিয়াল বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে লাইসেন্স গ্রহণ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনান্তে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানিগুলো থেকে না দাবি (এনওসি) গ্রহণ না করেই গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। বার্ক এ পর্যন্ত এরূপ কতগুলো লাইসেন্স দিয়েছে ও তার যৌক্তিকতা আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা যেতে পারে। এছাড়া বার্ক লাইসেন্স প্রদান করলেই গ্যাস সরবরাহ করতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ বাধ্য কি না, তা যাচাই করে দেখা যেতে পারে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, উল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা প্রস্তুত করতে হবে; যাতে বার্ক কর্তৃক লাইসেন্সকৃত কমার্শিয়াল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা, বেজা কর্তৃক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্লট, বিদ্যুৎ মূল্যের ওপর তরল জ্বালানির প্রভাব এবং তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি থাকবে। ওই উপস্থাপনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া বার্ক, বেজা, ইপিজেড ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজন করতে হবে।