অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ নারী ও শিশু উন্নয়নে অর্জন

মোকাম্মেল হোসেন: দিন বদলের অঙ্গীকার নিয়ে নারী ও শিশু উন্নয়নে বর্তমান সরকারের রয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য। এরই স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ইউএন উইমেন প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন এবং এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। এছাড়া ২০১৪ সালে ইউনেস্কোর পিস ট্রি পুরস্কার এবং গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ ২০১৮ পুরস্কারেও ভূষিত হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

দেশের মোট জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ নারী ও শিশু। নারী ও শিশুর সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন এবং সামগ্রিক উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সরকার গত ১২ বছরে নারী ও শিশুর উন্নয়নে অনেকগুলো আইন, নীতি ও বিধিমালা তৈরি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১; জাতীয় শিশু নীতি ২০১১; শিশুর প্রারম্ভিক যতœ ও বিকাশের সমন্বিত নীতি ২০১৩; মনোসামাজিক কাউন্সেলিং নীতিমালা ২০১৬ (খসড়া); জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নকল্পে কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০১৫; পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০; ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইন ২০১৪; পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩; বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে, তা রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থান তাদের ক্ষমতায়নে অবদান রেখেছে এবং জেন্ডার সমতা অর্জনের পথ কেবল সুগম করেনি; একইসঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে বেগবান করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রণীত জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০১৭ অনুযায়ী শিক্ষা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাপকাঠিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ফার্স্ট স্পট ইন জেন্ডার ইকুয়্যালিটি অর্জন করেছে। সরকার নারীর অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করায় সমাজ ও অর্থনীতিতে নারী এখন প্রভাবকের ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনসহ শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস, দারিদ্র্যবিমোচন, উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের আত্মপ্রকাশ ছাড়াও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। ২০১৭ সালের দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, জেন্ডার সমতা আনয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৪৪টি দেশের মধ্যে ৪৭তম হয়েছে। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে আছে। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০-এ উন্নীতকরণ, উপজেলা পরিষদে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি, ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী আসনের ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি ছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০১৫ অনুযায়ী, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।

সরকার বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, পুষ্টিসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি সৃজনশীল প্রজš§ গঠনে বদ্ধপরিকর। আমাদের মনে রাখতে হবে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারায় নারী ও শিশু এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অব্যাহত উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা এমন একটি দেশ গড়ব, যেখানে প্রত্যেক নারী ও শিশু তার অধিকার ও সক্ষমতা নিয়ে নিরাপদে সম্ভাবনাময় উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।

সরকারের এতসব প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং জনগণের জন্য সেবা সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সম্পৃক্ততা নারী ও শিশুসহ দেশের আপামর জনগণের উন্নয়ন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। এমন প্রত্যায় এবং অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে কাজ করে যেতে হবে। অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে টেকসই ও নিরাপদ করতে এ দায়িত্ব আমাদের সবার।

পিআইডি নিবন্ধ