বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে, এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এটি বিদ্যুৎ খাতে আমাদের সাফল্যকে অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে। ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারের বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পরামর্শ আমলে তো নেয়াই হচ্ছে না, বরং নতুন করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
‘চলতি অর্থবছর রেকর্ড ৪৬ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা লোকসানে পড়তে যাচ্ছে পিডিবি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। প্রতিবেদনের তথ্য, দেড় বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭৩ শতাংশ। ডলারের বিনিময়হার বৃদ্ধি, নতুন উৎপাদনে আসা বড় আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লা ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দেশে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো প্রভৃতি কারণে এ ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ফলে দুই দফা বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য বৃদ্ধি করেও সামাল দেয়া যাচ্ছে না উৎপাদন ব্যয়ের ঘাটতি। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে যখন উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আইএমএফ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে, তখন পিডিবির লোকসান নিঃসন্দেহে হতাশার।
গত বছরও আইএমএফের এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রতিনিধিদল বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করে। তখন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রশ্ন ছিলÑবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে, সেটি ২০৩০ সালে শেষ হবে কি না? তখন পিডিবি বলেছে, ‘সেটি সম্ভব নয়, কারণ নতুন বেশকিছু আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) আসছে। সেগুলোকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।
ওই সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি দেখিয়েছেন বেসরকারি, দেশীয় ও বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে ২০৫১ সাল পর্যন্ত। আর চলমান কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ শেষ হবে ২০৪৭ সালে। চুক্তির কারণে পুরো ক্যাপাসিটি চার্জই পরিশোধ করতে হয়; মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি বাতিলেরও সুযোগ নেই।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশ বড় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে। যেসব কেন্দ্র জাতীয় সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে না (অলস বসে থাকছে), এগুলোকে কেন ভাড়া দিতে হবেÑএ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। নানা কারণে দেশে অনিশ্চিত পরিস্থিতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায়ও পিডিবি যদি লোকসান দিতেই থাকে, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। তাই আমরা আশা করি, অপ্রয়োজনীয় ও অলস বসে থাকা ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে।