অবকাঠামো খাতে বাস্তবানুগ পরিকল্পনা প্রত্যাশিত

যে কোনো দেশের উন্নয়নে অবকাঠামো খাতের গুরুত্ব সর্বাধিক। উপযুক্ত ভৌত অবকাঠামো ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর তাই অবকাঠামো নির্মাণে বাস্তবানুগ পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও অবহেলিতই থাকছে রেল!’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা নাগরিকদের মধ্যে হতাশার জš§ দেবে বৈকি।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অবকাঠামো নির্মাণে পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১০০ বছর পিছিয়ে। প্রতিবেদনের এ বক্তব্য ভিত্তিহীন বলার সুযোগ নেই। কারণ এ বক্তব্যের বিষয়ে বাস্তব উদাহরণও বিদ্যমান। আজ থেকে ১০৫ বছর আগে ১৯১৫ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। এটি একটি রেল সেতু। পদ্মা নদীতে ব্রিটিশ সরকার সে সময়ের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছিল। ওই সময়েই রেলের গুরুত্ব অনুধাবন করে ঔপনিবেশিক সরকার দুই লেনের রেল সেতু নির্মাণ করেছিল। অন্যদিকে এই আধুনিক যুগে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেললাইন হচ্ছে এক লেনের। অথচ সেতুর যে পরিসর, তাতে দুই লেনের রেল ট্র্যাক স্থাপন অসম্ভব ছিল না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। বিষয়টি পরিকল্পনা প্রণয়ন পর্যায়েই কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত ছিল বলে মনে করি।

পরিকল্পনা প্রণয়নে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে না পারলে তা রাষ্ট্রের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ানো স্বাভাবিক। যমুনা নদীতে সেতু নির্মাণে বিচক্ষণতার এমন ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল ট্র্যাক স্থাপন করা হলেও তা সেতুর জন্য এখন বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নতুন করে দুই লেনের পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করতে হচ্ছে এখন। এতে রাষ্ট্রের ব্যয় হবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনা করে উপযুক্ত সক্ষমতার সেতু নির্মাণ করা হলে হয়তো এখন নতুন করে পৃথক রেল সেতু নির্মাণ প্রয়োজন পড়ত না। ফলে পৃথক রেল সেতুর জন্য  যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তা নিয়ে অন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে নেওয়া যেত।

পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি আমাদের পরিকল্পনাবিদ ও রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের যে চালচিত্র, তাতে এ ধরনের অবকাঠামোর গুরুত্ব উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকবে। কাজেই ভবিষ্যতের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবানুগ অবকাঠামো নির্মাণই শ্রেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন একাধিক ভুল করা সত্ত্বেও সেখান থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিচ্ছি না। একই ভুল বারবার করেই চলেছি।

পদ্মা সেতুর মতো রাষ্ট্রের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা নির্মাণে আরও প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করি। সেতুটিতে চার লেনের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে। তার নিচে থাকবে রেললাইন। আর চার লেনের সড়কের নিচে অনায়াসেই দুই লেনের রেল ট্র্যাক স্থাপন করা যেত বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা; যা অবকাঠামোটির ব্যবহার উপযোগিতা আরও বাড়িয়ে দিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে উল্লিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা হবে বলেই প্রত্যাশা।