Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 4:59 am

অবলোপনকৃত ঋণ আদায় জোরদার করুন

খেলাপি ঋণ আমাদের ব্যাংক খাতের এক বড় সমস্যা। ক্রমেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ঘুরেফিরে বড় খেলাপিরাই ঋণ পাচ্ছেন, এ অভিযোগও রয়েছে। ঋণ আদায়ে সময় সময় লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হলেও ফল হতাশাজনক। গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদন ‘খেলাপির আড়ালে ৬০,৭৮১ কোটি টাকা অবলোপন’ বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। তথ্যমতে, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ আড়াল করতে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। ফলে প্রতি বছর অবলোপনকৃত ঋণ বাড়ছে। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবলোপন করা ঋণের পুঞ্জীভূত স্থিতি ছিল ৬০ হাজার ৭৮১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

খাত-সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেছেন, অনেক ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদন পরিষ্কার রাখতে খেলাপি ঋণ কমানোর সহজ পন্থা হিসেবে অবলোপনকে বেছে নিয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারের চেয়ে তারা মনোযোগ দিচ্ছে অবলোপনের দিকে, যা কোনো ভালো সমাধান নয়। কারণ যে পরিমাণ  অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ করা হয়, সে পরিমাণ আদায় হয় না। ঋণ আদায় না করে যদি অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ কৌশল বেছে নেয়া হয়, তাহলে একসময় ব্যাংকের মূলধনও শেষ হয়ে যায়। তাই এটা ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই।

আমাদের মনে আছে, কভিড-১৯ মহামারির কারণে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনে নীতিমালা শিথিল করা হয়। ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও ঋণগ্রহীতাকে খেলাপির তালিকায় দেখানো যাবে না। ২০২০ সালজুড়ে এ সুবিধা পেয়েছেন তারা। ফলে ওই সময় ঋণের কিস্তি না দিয়েও নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি হননি কেউ। কভিডকালে ঋণ নীতিমালায় শৈথিল্য না এনে উপায় ছিল না। কিন্তু তাতে কেউ যেন প্রশ্রয় না পায়, সেদিকেও সতর্ক নজর রাখতে হবে।

কভিডকালে ব্যাংক খাতের মুনাফায় বড় উল্লম্ফন চলছে। অথচ ঋণ আদায় পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ এখন ঋণ শোধ না করলেও কেউ খেলাপি হচ্ছেন না। কিন্তু কাগুজে মুনাফা দেখিয়ে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর পুঞ্জীভূত অবলোপনের অবলোপন থেকে মোট আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকা অর্থাৎ বেশির ভাগই অনাদায়ী রয়ে গেছে। ঋণ পুনঃতফসিলের নামে চিহ্নিত খেলাপিদের অন্যায় সুবিধা দেয়া কোনো বিবেচনায়ই উচিত হবে না। তাতে ভালো ঋণগ্রহীতারা নিরুৎসাহিত হবেন। ঋণ দেয়ার সময় যথানিয়মে ঝুঁকি পর্যালোচনা করতে হবে। ঋণখেলাপিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা প্রভাবশালী অথবা অসাধু ব্যাংককর্মী কারও সহায়তায় নতুন করে যেন ঋণ নিতে না পারেন। ঋণখেলাপি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় প্রতি বছর অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কিংবা নিতে পারছে না। নিয়মিত পরিদর্শন, ঋণ আদায় অগ্রগতি পর্যালোচনা ও তদারকি জোরদার করা গেলে খেলাপি ঋণ বাড়ার কথা নয়।