ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: মানসম্মত পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় প্রকৃতির সৌন্দর্যপিয়াসীদের তৃষ্ণা মেটানোসহ বিনোদনের সুবিধাবঞ্চিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ। বিপুল সম্ভাবনার পর্যটন খাত পিছিয়ে আছে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে বড় অর্থনৈতিক উৎসে পরিণত হবে।
নিবিড় প্রকৃতি, ঐতিহাসিক স্থান কিংবা পুরার্কীতি সব রয়েছে এখানে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার মতো নানা উপাদান। কিন্তু পরিকল্পিত আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার অভাবে পর্যটকদের অধিকাংশই জানেন না এসব পর্যটন কেন্দ্রের কথা। স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটনের বিকাশে পর্যটন কেন্দ্রগুলো যেমন আলাদা করে চিহ্নিত করা প্রয়োজন, সেইসঙ্গে দরকার পর্যটকদের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করা। এসব না থাকার কারণে পিছিয়ে আছে পর্যটন খাত।
লালমাটির বরেন্দ্র অঞ্চল, উঁচু-নিচু ভূমি আর সবুজ অরণ্যের বাবুডাইং। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এলাকা বাবুডাইং। কিন্তু থাকার জন্য কোনো হোটেল, মোটেল কিংবা গেস্ট হাউজ নেই এখানে। তাছাড়া আশেপাশে নেই কোনো খাবারের হোটেল। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থাও নেই।
এছাড়া মুসলিম স্থাপত্যের ঐতিহ্যবাহী অনেক প্রাচীন নির্দশন রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ শুধু দেশেই নয়, বিদেশিদের কাছেও অন্যতম আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। আমের রাজধানী-খ্যাত এ জেলায় প্রতি বছর আম মৌসুমে অনেক পর্যটক আসে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমবাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে। এ অঞ্চল ভ্রমণে মানুষের আগ্রহ বাড়লেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পর্যটকদের থাকার জন্য অবকাঠামোগত সুযোগ কম থাকায় এখানে পর্যটনশিল্পে বিকাশ হচ্ছে না। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও এখানে তেমন আবাসিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট তৈরি হয়নি, যার ফলে এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। মূলত আবাসন সংকট চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর্যটন শিল্প বিকাশের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাঁপাইানবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এজেডএম নুরুল হক বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, আবাসন সংকট ও পর্যটন স্পটগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা গেলেই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুখরিত হয়ে উঠবে, যাতে বিশ্বব্যাপী চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিচিতি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়বে। সভ্যতার একটি কেন্দ্র হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। পর্যটনশিল্প কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, জাতীয় আয়, রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অন্যতম ভূমিকা রাখবে। জেলার সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বর্তমান ধারা অব্যহত রাখা গেলে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকাশ ঘটবে পর্যটনশিল্পের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সেতুসংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হবে অত্যাধুনিক মানের পর্যটন মোটেল। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর অনুরোধে পরিকল্পনামন্ত্রী ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত বারোঘরিয়া দৃষ্টিনন্দন শিশুপার্ক।
