অবিমিশ্র আশীর্বাদ বা অভিশাপ নয়

 

দেশের চলচ্চিত্র ব্যবসা নিয়ে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘যৌথ প্রযোজনা সিনেমার নামে যৌথ লগ্নি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা মানা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিও বাস্তব বলে প্রতীয়মান। খেয়াল করার মতো বিষয়, সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ করলে সেখানকার অর্ধেক শিল্পী হতে হবে বাংলাদেশের। তদুপরি শুটিংয়ের পুরো অর্ধেক ধারণ করতে হবে এখানে। তাছাড়া নায়ক বা নায়িকার যে কোনো একজনকে হতে হবে বাংলাদেশি আর দুদেশের প্রযোজনা সংস্থার নাম উল্লেখ থাকতে হবে পোস্টারে। অথচ কয়েক বছর ধরে নীতিমালাটি না মেনে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মিত হচ্ছে বলে কর্মটি যৌথ লগ্নিতে উপনীত হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। তাদের বক্তব্য, নীতিমালা না মানায় যৌথ প্রযোজনার ছবিতে বাড়ছে বিদেশি শিল্পীর ভিড়। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় শিল্পীগোষ্ঠীগুলো। এদিকে যৌথ প্রযোজনার নামে একশ্রেণির চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীর হাত ধরে নাকি সিনেমা ও বিজ্ঞাপনের নামে বৈধ পথে ‘পাচার’ হচ্ছে অর্থ। ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে এটিকে সুলক্ষণ বলে ধরে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রথম কথা, নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় বাস্তবায়নের জন্য; নইলে নীতিমালার প্রয়োজন ছিল না। ফলে নীতির লঙ্ঘন হলে যথাবিহিত দণ্ড প্রদান করাই শ্রেয়। এও অনস্বীকার্য, চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো শিল্পকলাকে নীতিমালায় আবদ্ধ রাখা কঠিন। এমন প্রেক্ষাপটে নীতিমালার দুর্বলতার বিষয়টি আমাদের প্রতিনিধির কাছে স্বীকারও করেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ এক কর্মকর্তা। এর প্রতিকারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের সুপ্রভাব-কুপ্রভাব নিয়ে সরব দুই পক্ষই রয়েছে দেশে। দুর্ভাগ্যজনক, এ উভয় দলই কট্টর। এক দল মনে করে, নিজস্ব সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র ব্যবসায় এক অপচ্ছায়ার নাম যৌথ প্রযোজনা এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি সিনেমা বড় ষড়যন্ত্রের শিকার। ‘উপযুক্ত বিনিয়োগ’ পেলে এর মুখোশ উšে§াচন করবেনÑএমনই তাদের প্রত্যয়। দ্বিতীয় দলের দাবি, যৌথ প্রযোজনা দর্শককে প্রেক্ষাগৃহমুখী করবে; সমৃদ্ধ করবে স্থানীয় চলচ্চিত্রকে। উভয় দলই কোনো না কোনো ভ্রান্তিতে রয়েছে বলে ধারণা কারও কারও। তাদের মত হচ্ছে, স্থানীয় দর্শকদের চাহিদানুসারে নিজস্ব সক্ষমতা কতটুকু তৈরি হয়েছে, সেটি বিশ্লেষণসাপেক্ষ। উপরন্তু বাংলাদেশ সরকারের এখন হয়তো ক্ষমতা রয়েছে সিনেমায় বিপুল বিনিয়োগের; কিন্তু সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালিসিস’ করে দেখবে তারা। আবার যৌথ প্রযোজনা শুধু স্থানীয় চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করে না; অতিমাত্রায় যৌথ প্রযোজনানির্ভরতা এ চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। স্পষ্টত, যৌথ প্রযোজনা অবিমিশ্র আশীর্বাদ বা অভিশাপ নয়। এ অবস্থায় মধ্যপন্থা অবলম্বন জরুরি। সেজন্য একদিকে স্থানীয় চলচ্চিত্রশিল্প যেন দ্রুত বাজার অনুযায়ী সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি সীমিত পরিসরে হলেও যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলো যেন দর্শকদের হলমুখী করতে ও তাদের রুচি বাড়াতে সহায়ক হয়, সেটি নিশ্চিত করা চাই।