শেয়ার বিজ ডেস্ক: ঋণ খেলাপি, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এই পরামর্শ দিয়ে বলেছে, ঋণ খেলাপি ও অন্যান্য বড় মাপের দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করতে বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওএইচসিএইচআর তাদের জেনেভা কার্যালয় থেকে ‘বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর বিক্ষোভে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে, অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বাংলাদেশের বাইরে যেসব দেশে পাচার হয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এ ধরনের সম্পদ অবিলম্বে জব্দ করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারে দেশে ফেরত পাঠানো যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিকভাবে প্রকাশিত ব্যক্তিদের সুবিধার্থে তাদের এখতিয়ারে স্থানান্তরিত সম্পদ যাচাই-বাছাই করার জন্য প্রাপকদের তাদের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা উচিত।’ ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতিবিরোধী আইন কঠোরভাবে ও সমানভাবে প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সকলকে, বিশেষ করে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ
ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থাটি দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্যদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও পর্যাপ্ত আইনি কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জনসাধারণের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে, যাতে তারা আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে। জাতিসংঘের ফ্যাক্টস-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাকে ক্ষুণœকারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও অলিগোপলির বিরুদ্ধে জরুরি আইনি ও নির্বাহী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশ সরকারকে নির্দিষ্ট বড় ব্যবসায়ের পক্ষে আইনগত ও অর্থনৈতিক অযৌক্তিক ব্যবস্থা বাতিল করে ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি প্রত্যক্ষ কর, বিশেষ করে উচ্চ আয়ের ব্যক্তি ও করপোরেশনগুলোর জন্য আয় ও সম্পদের করের ওপর আরও বেশি মনোনিবেশ করা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বমূলক কর রেয়াতি বাতিলসহ আরো ন্যায়সংগত কর ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা রক্ষা, শ্রম পরিদর্শন জোরদার, বিশেষ করে নারীর জন্য কাজের ব্যবস্থার উন্নতি, ন্যায্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করাসহ ইউনিয়ন বিরোধী বৈষম্য, অন্যায্য শ্রম আইনের চর্চা এবং শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় শ্রম আইন সংশোধনীর মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। মানবাধিকার-সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবিলা ও প্রাসঙ্গিক সংস্কারে কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ পদ্ধতিতে উš§ুক্ত আমন্ত্রণ জানাতে ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করেছে। এ ছাড়া সংস্থাটি বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে আরও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের সুপারিশ করেছে, যাতে এটি জবাবদিহিকে সমর্থন করে ও লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারে।