অব্যাহত বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম এশিয়ায় বড় প্রভাব পড়ার শঙ্কা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এটা ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এশিয়ার অর্থনীতিতে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স, আরব নিউজ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছে। গতকাল লেনদেনের এক পর্যায়ে ব্রেন্ট তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৭৯ ডলার ৩৬ সেন্টে দাঁড়ায়, যা আগের দিনের লেনদেনের সর্বশেষ দামের তুলনায় আট সেন্ট বেশি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবরাহের চুক্তিতে জ্বালানি তেলের দাম ব্যরেল প্রতি ৭১ ডলার ৭১ সেন্টে দাঁড়ায়, যা সর্বশেষ দামের তুলনায় ২২ সেন্ট বা দশমিক তিন শতাংশ বেশি।
বিশ্বের জ্বালানি তেল বাণিজ্যে ব্যবহƒত মার্কিন ডলারের মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারও একটি ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে ভোক্তা ও কোম্পানি উভয়েরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কানাডার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেট চলতি মাসেই এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তেলের দাম বৃদ্ধিতে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের পর তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার পর এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাপী বর্তমানে দিনে প্রায় ১০ কোটি ব্যারেল জ্বালানি তেল ব্যবহƒত হয়। এর ৩৫ শতাংশই ব্যবহƒত হয় এশিয়া অঞ্চলে। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী এ চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে কম তেল উৎপাদনকারী অঞ্চল এশিয়া। এ অঞ্চলে মাত্র ১০ শতাংশ তেল উৎপাদিত হয়।
এএনজেড ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, জ্বালানি তেলের দাম যে কোনো সময় ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি এ দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে সমর্থন দিচ্ছে।
ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় মধ্যপ্র্যাচ্যের তেল সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। এতে জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশটির ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তেলের বাজারে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনিজুয়েলায়ও তেলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় তেলের দাম বাড়ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ চীন গত এপ্রিল মাসে প্রতিদিন ৯৬ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল আমদানি করেছে, যা বিশ্বের মোট চাহিদার ১০ শতাংশ। এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশ চীনের প্রতিদিন আমদানি করা তেলের মূল্য ৭৬৮ মিলিয়ন ডলার, মাসে ২৩ বিলিয়ন ডলার এবং বছরে ২৮০ বিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো বিশেষ করে ভারত ও ভিয়েতনাম জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বেশ উদ্বেগের মধ্যে পড়বে। ভারতের বাজারে তেলের দাম বেশ কয়েকদিন ধরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এশিয়ার আমদানি নির্ভর দেশগুলোর জন্য তেলের বাড়তি দাম মেটানো বেশ কঠিন। কারণ এসব দেশগুলোর জাতীয় সম্পদ এখনও পর্যাপ্ত বড় হয়নি। এক্ষেত্রে এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলো বড় অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।