বিমায় মুখ্য নির্বাহী সংকট

অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল করে প্রবিধান সংশোধন হচ্ছে

রাহমান আরিফ : বিমায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সংকট প্রকট। যে কারণে নিয়ম ভেঙে ‘চলতি দায়িত্ব’ বা ‘ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী’ দিয়ে চলছে বেশকিছু কোম্পানি। কিন্তু বর্তমান নিয়ম-শর্ত মেনে নিয়োগ দেয়ার মতো যোগ্য লোকবল খুঁজে পাচ্ছে না বিমা কোম্পানিগুলো। এ নিয়ে কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (বীউনিক) তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মর্কতা নিয়ে সংক্রান্ত প্রবিধান সংশোধন করেছে বীউনিক। এরই মধ্যে এ সংশোধিত খসড়া প্রবিধান চূড়ান্ত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বীউনিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে ২০১২ সালে প্রবিধান তৈরি করে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীউনিক। জনবল সংকটের কারণে প্রবিধানের শর্ত মেনে শীর্ষপদে নিয়োগ দিতে পারছে না। যে কারণে কোম্পানিগুলোকে জরিমানা-শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে টানাপোড়েনের মুখে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের প্রবিধান সংশোধন করেছে বীউনিক।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মুখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগের জন্য আগে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দুই বছর ও বিমা ব্যবসায় ১২ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত ছিল। সংশোধনীর পর কোনো কোম্পানিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এক বছর আর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব অভিজ্ঞতার শর্ত দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এক বছর ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দুই বছরসহ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি বিমার মুখ্য নির্বাহী পদের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। মূলত জনবল সংকট মোকাবিলার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে মুখ্য নির্বাহী সংকট কমবে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীলরা।

তথ্যমতে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে কোম্পানির পক্ষ থেকে নতুন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ বা বিদ্যমান নিয়োগ নবায়নের জন্য বীউনিকের কাছে আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে আবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগে ১৫ দিন আগে অবগত করার নির্দেশনা ছিল। একইভাবে আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে বীউনিককে সিদ্ধান্ত দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বাস্তবতা বিবেচনায় এ সময় বাড়িয়ে দুই মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে অন্য কোম্পানিতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করলে বা দুর্নীতির কারণে চাকরিচ্যুত হলে অন্য কোনো কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এর আগের প্রবিধানে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। যে কারণে অনেক ব্যক্তিই এক কোম্পানিতে অনিয়ম করে চাকরিচ্যুতির পর অন্য কোম্পানিতে একই পদে যোগ দিয়েছেন; যা এর খাতের অস্বচ্ছতা-অনিয়ম ত্বরান্বিত করেছে। তাই এ বিষয়টি সংশোধিত খসড়ায় নতুন করে যোগ হয়েছে। এতে অভিযুক্ত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিমার কোম্পানির শীর্ষপদে নিয়োগের পথ বন্ধ হবে। একইভাবে মুখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগে বিদেশি পেশাগত ডিগ্রির পাশাপাশি বাংলাদেশি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের দেয়া পেশাগত ডিগ্রিও গুরুত্ব পাবে। আগে দেশে বিমা বিষয়ে পেশাগত ডিগ্রি অপ্রতুল ছিল। যে কারণে বিদেশি ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এখন দেশীয় ডিগ্রি সহজলভ্য হওয়ার কারণে সেই ডিগ্রিকেও সমান গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদ্যমান প্রবিধানে শুধু সংশ্লিষ্ট কোম্পানিই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণের ক্ষমতা রাখে। এ বিষয়ে নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করেছে বীউনিক। নতুন প্রবিধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণের নির্দেশ দিতে পারবেÑএমন নির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে নির্দেশনা দেয়ার আগে অপসারণ প্রশ্নে কমিটি গঠন করে তদন্তও করতে করতে পারবে বীউনিক। তবে অপসারণের আগে সেই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার কথা নতুন প্রবিধানে বলা হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, সংশোধিত নতুন প্রবিধানের ফলে বিমা খাতে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা অচলাবস্থার অবসান হবে। বিমা কোম্পানিগুলোকে আর এ নিয়ে আর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না। সেইসঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিমার শীর্ষপদে নিয়োগ ও অপসারণের পথ তৈরি হবে। এতে বিমায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে; যা এ খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।