অভিন্ন বেতন কাঠামো বাতিল চায় নেপালের হোটেল কর্তৃপক্ষ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নেপালের হোটেল কর্তৃপক্ষ অভিন্ন বেতন কাঠামোর পরিবর্তে কভিড-১৯ মহামারির আগের গ্রেড অনুযায়ী বেতন দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। খবর: কাঠমান্ডু পোস্ট।

মহামারি শুরু হওয়ার পর পর্যটননির্ভর হিমালয় প্রজাতন্ত্রের হোটেল কর্তৃপক্ষ কর্মী ছাঁটাই যেন না করা হয় সেজন্য নানা পদক্ষেপ নেয়। ২০২০ সালের জুলাইয়ে সব কর্মী রিসিপশনিষ্ট থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক পর্যন্ত সবার একই বা অভিন্ন বেতন নির্ধারণ করা হয়। সেই দুরবস্থা কাটিয়ে উঠেছে দেশটির পর্যটন খাত।

হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিনায়ক শাহ বলেন, কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলগুলো ধকল কাটিয়ে উঠেছে। তাই আমরা ট্রেড ইউনিয়ন ও কর্মীদের সঙ্গে মহামারির আগের সময়ের বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণের জন্য একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছি। তবে যেসব হোটেল পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোর বেলায় এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না বলে জানান তিনি। তাদের জন্য আলাদা নিয়ম করার কথা বলেন তিনি, যা মালিকপক্ষ ও কর্মীদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।

মহামারির কারণে নেপালে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই প্রথম লকডাউন দেয়া হয়। এরপর হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপাল অভিন্ন বেতন কাঠামো চালু করে। চুক্তি অনুযায়ী, ডিলাক্স ফাইভ স্টার (২০০ কক্ষের বেশি) ও ফাইভ স্টার হোটেলের সব কর্মী মাসে যথাক্রমে ১০ ও ৯ হাজার রুপি পেতেন। ১০০ কক্ষের বেশি ফোর স্টার হোটেলের কর্মীরা পেতেন ৮ হাজার ৪৫৫ রুপি। অনূর্ধ্ব ১০০ কক্ষবিশিষ্ট ফোর স্টার হোটেলের কর্মীরা মাসে সর্বসাকুল্যে ৮ হাজার রুপি পেতেন। চুক্তি অনুযায়ী, থ্রিস্টার ও টুস্টার হোটেলের কর্মীরা পেতেন যথাক্রমে ৫ হাজার ও ৪ হাজার ৩০০ রুপি। ওয়ান স্টার ও বাজেট হোটেলে বেতন নির্ধারণ করা হয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে। চুক্তি শুরু হয় ২০২০ সালে মধ্য এপ্রিলে, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল একই বছরের শেষ দিন।

তবে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অ্যাসোসিয়েশন এ সময়সীমা বাড়ায়। অ্যাসোসিয়েশনের সব সদস্য (৩ হাজার হোটেল) সঙ্গত কারণে এ নির্দেশ মেনে নেয়। কেননা মৃতপ্রায় পর্যটন খাত সচল করতে এর বিকল্প ছিল না হোটেলগুলোর কর্তৃপক্ষের। একই সঙ্গে কর্মীদের বেতন প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনে কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছর মার্চে নেপাল সরকার সব ধরনের কভিড-১৯ বিধিনিষেধ তুলে দেয়। এমনকি পূর্ণ ডোজ টিকা নেয়া বিদেশি পর্যটকদের পিসিআর পরীক্ষাও বাতিল করা হয়। এই ঘোষণার পর পূর্ণোদ্যমে খুলে দেয়া হয় সব হোটেল।

বিনায়ক শাহ বলেন, খাতটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। অনুসন্ধান ও বুকিং বেড়েছে। চলতি মাসে আমরা দিনে গড়ে ৭৫ হাজার বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি আশা করছি। হোটেল মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় অনেক বিলাসবহুল হোটেল ইতোমধ্যে ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে। ফাইভ স্টার সোয়ালটি হোটেল লিমিটেড জানায়, গত দুই বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে লাভের মুখ দেখেছে তারা। এ সময় রেকর্ড পাঁচ কোটি রুপি আয় করে হোটেলটি। অন্য বড় হোটেলগুলোও মুনাফার ধারায় ফিরেছে। ফাইভ স্টার হোটেল তারাগাঁও রিজেন্সি লিমিটেডও দ্বিতীয় প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য আয় করেছে, যা দিয়ে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে তারা। নেপাল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত তারাগাঁও। তারা হায়াত রিজেন্সি কাঠমান্ডু পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। আলোচিত সময়ে তারাগাঁও প্রায় ৩৩ কোটি রুপি মুনাফা করেছে।

গত মাসে নেপালে ৪২ হাজার ছয়জন বিদেশি পর্যটক বেড়াতে গিয়েছিলেন, যা গত দুই বছরের মধ্যে একক মাসে সর্বোচ্চ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক রাজ জোশি বলেন, মহামারিপূর্ব অবস্থায় ফিরছে দেশের পর্যটন খাত। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহামারির কারণে নেপালের জিডিপি ২০১৯ সালের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে ২০২০ সালে।