আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীতে শোভাযাত্রা করে কয়েকটি সংগঠন। শোভাযাত্রার পর সমাবেশে সংগঠনগুলোর নেতারা অভিবাসন ব্যয় শূন্যে নামিয়ে আনার দাবি জানান।
আয়োজক সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন বিশ্বের অন্য সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যয় সবচেয়ে বেশি। অভিবাসী গৃহশ্রমিকের কাজকে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার কনভেনশন ১৮৯ অনুযায়ী কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি, নারী অভিবাসী শ্রমিকের কর্মঘণ্টা দৈনিক আট ঘণ্টা, দৈনিক নির্ধারিত কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত সময়ের কাজের মজুরি দ্বিগুণ করাসহ দেশে-বিদেশে সব নারী শ্রমিকের নির্ধারিত শ্রমঘণ্টার মজুরি আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার কনভেনশন অনুসারে দেয়াসহ নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা ও মর্যাদার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
সব দাবি পূরণ করা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু এটি স্বীকার করতেই হবে সব দাবিই ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক। প্রবাসে আমাদের নারী শ্রমিকরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। যেমন শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া একজন নারী বলেছেন, করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। করোনার ভুল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। তার দাবি, এগুলো যেন না হয় এবং এর ফলে কেউ যেন চাকরি না হারায়। বিদেশে নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, দেশে এসে এখন কোনো কাজ নেই।
দেশে কর্মসংস্থান সংকট প্রকট। সবার কর্মসংস্থান করা সহজ নয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য বিদেশ যেতে বাধ্য হয় বেকার জনগোষ্ঠী। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ১৯৭৬ সালে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হওয়ার থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন। গত ৩১ মে পর্যন্ত ৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৩৯ জন নারী শ্রমিক গেছেন।
প্রবাসী-আয় আমাদের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখলেও প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি আমরা তেমন দায়িত্বশীল নই। নারী কিংবা পুরুষ ধারদেনা করে, ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশ যান তারা। দেশে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দ্বারা ভোগান্তির শিকার হন, বিদেশেও নানাভাবে বঞ্চিত ও প্রতারিত হন তারা। বিদেশ যাওয়ার খরচ জোগাতে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে লেগে যায় কয়েক বছর। অনেক সময় নানা জটিলতায় খালি হাতে ফিরতে হয় তাদের।
অথচ রাষ্ট্র উদ্যোগ নিয়ে কম খরচে কিংবা বিনা খরচে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের সক্ষম বিদেশে নিতে পারে।
ঋণ নিয়ে বিদেশ যাওয়া শ্রমিকরা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। বিদেশ গিয়ে কাজ না পাওয়া বা কম মজুরির কারণে অনেকে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন। অথচ বিদেশ যেতে অতিরিক্ত খরচ হয় তাদের। যে শ্রমিকদের আয়ে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলে, তাদের দুর্ভোগে নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে কষ্টে-সৃষ্টে বিদেশ যান নিরীহ শ্রমিকরা। অভিবাসন ব্যয় হুট করে শূন্যে আনার সুযোগ কম। তবে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। রপ্তানিকারকদের অসাধুতায় যাতে বিদেশ যাওয়ার খরচ না বাড়ে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।