Print Date & Time : 23 July 2025 Wednesday 7:24 pm

অভিভাবকহীন চলছে বেনাপোল বন্দর ১০ মাস শূন্য পরিচালকের পদ

মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর): দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে। দীর্ঘ ১০ মাস বন্দরের পরিচালকের পদটি রয়েছে শূন্য। ভারপ্রাপ্তের ওপর ভর করে চলছে বন্দরের কার্যক্রম। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি বন্দর ব্যবহারকারীদের। সর্বশেষ উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বেনাপোল স্থলবন্দরে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে উপসচিব প্রদোষ কান্তি দাস বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে কোনো পরিচালক নিয়োগ দেয়নি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ১০ মাস ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আবদুল জলিল।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দরের তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। যে কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। সেখান থেকে দিকনির্দেশনা আসার পর কাজ হয় বন্দরে। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত এখানে কোনো সমস্যা নেই। কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমরাই সেটার দ্রুত সমাধান করে দিচ্ছি।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে অবলুপ্ত ওয়্যার হাউজিং করপোরেশন (বিডাব্লিউসি) বেনাপোল বন্দরের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৯ সালের ৬ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল বন্দরকে শুল্ক আইন-১৯৬৯তে শুল্ক স্টেশন ঘোষণা করেন। প্রজ্ঞাপন নম্বর ৪৯৩/ডি/কাস/৭৯। ১৯৭৯ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশ পাট মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেয় বন্দরের। পরে ১৯৮৪ সালের নভেম্বর মাসে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে।

২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বেনাপোল বন্দর বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। এই বন্দরকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় আনার পর ১৯ বছরে ১৩ জন পরিচালক দায়িত্ব পালন করেছেন। আর চারবার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেছেন দুজন উপপরিচালক।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, পরিচালক পদে যেসব কর্মকর্তা আসেন তারা এখানে থাকতে চান না। পরিচালক না থাকায় যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের হাতে দাপ্তরিক ক্ষমতাও কম। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাড়া তারা কিছুই করতে পারেন না।

তিনি বলেন, প্রতি বছর এই বন্দর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোর অবস্থা বেহাল। এতে পণ্য খালাসে বিলম্ব ও অর্থনৈতিক ক্ষতিতে ব্যবসায়ীরা। ফলে তারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। দেশের সিংহভাগ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানার কাঁচামাল আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান।

জানা গেছে, প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, যা থেকে সরকারের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হয়। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়।

বেনাপোল স্থলবন্দর উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, একজন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা এখানে নিয়োগ দিলে তারা এখানে এসে কয়েকদিন পর বদলি হয়ে চলে যান। আবার অনেকে এখানে আসতেও চান না। যে কারণে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বর্তমান বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আবদুল জলিল ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের কাজ করছেন।

তিনি বলেন, আপাতত এখানে কোনো সমস্যা নেই। কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমরাই সেটার দ্রুত সমাধান করে দিচ্ছি।