অভিযুক্ত ই-কমার্স যোগাযোগ না করলে সদস্যপদ বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে যোগাযোগ না করলে তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হবে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান এ এইচ এম শফিকুজ্জামান এই নির্দেশ দেন। দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসএসএল কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থলেডটকম ও বুমবুমডটকমের গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে যোগাযোগ না করলে ধরে নেয়া হবে এসএসএলসহ অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়েতে যে টাকা আটকে আছে তাতে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির দাবি নেই। ফলে টাকাগুলো যে অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে, সেখানে রিফান্ড করা হবে বলে জানান ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান।

শফিকুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়া শুরু করেছি। এর মধ্যে কিউকম, দালাল প্লাস ও আলেশা মার্টের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। আজ দুটি প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরত দেয়া শুরু হলো। আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করছি খুব সহসা আমরা সেসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের টাকা পর্যায়ক্রমে ফেরত দিতে পারব।

তিনি বলেন, পেমেন্ট গেটওয়েতে যে টাকাগুলো আটকে আছে, যে টাকাগুলো ফেরত দেয়া হয়নি সেগুলো গ্রাহকদেরই টাকা। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি কাজ করছে। ই-কমার্সের বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, তাদের যে টাকা পয়সাগুলো আটকে আছে, যেগুলোর ডেলিভারি হয়নি, সে টাকাগুলো আমরা ফেরত দিতে পারি, সেখানে আসাদের এসএসএল, নগদ, বিকাশ ও ফস্টার সবাই একটি টিম হিসেবে কাজ করছি।

ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। ফলে একটু হলেও স্বস্তির জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এর বাইরেও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এজন্য আমরা একটি মেসেজ দিতে চাই, ৩১ মার্চের পর ২৪ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব। তাদের সম্পূর্ণ আইনের আওতায় আনার জন্য। অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা গা ঢাকা দিয়ে আছে, অনেকে ভয়-ভীতিতে আছে। তাদের ভয়ভীতির কিছু নেই, যেগুলোর মামলা হয়েছে, সেগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় চলবে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে চায়, তাদের সব ধরনের সহায়তা দেব। ইক্যাব হলো ডিজিটাল কমার্স খাতের প্ল্যাটফর্ম। ই-কমার্সের অভিভাবক ইক্যাব। এজন্য ইক্যাব থেকে একটি লিখিত নোটিশ করতে বলা হয়েছে যে, ৩১ মার্চের পরে যারা যোগাযোগ করবে না, তাদের সদস্যপদ বাতিল করতে হবে। এছাড়া যারা আইনের আওতায় আছে তাদের ইক্যাব থেকে একটু সহায়তার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তাদের সহায়তায় যদি কিউকমের প্রেসিডেন্টকে বের করে নিয়ে আসা যায়, তাহলে অনেক উপকার হবে। কারণ তাদের কাছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা রয়েছে, যা দিয়ে গ্রাহকদের পণ্য বা টাকা দিতে পারব। তবে যারা জেলে নেই, তাদের টাকা ফেরতে সময় লাগার কথা নয়। এ জন্য অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়া হবে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি তারা যোগাযোগ না করে তাহলে ধরে নেয়া হবে এসএসএলসহ অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়েতে যে টাকা আটকে আছে, তাতে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির দাবি নেই। ফলে সেই টাকাগুলো যে অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে সেখানে রিফান্ড করা হবে।

শফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের ই-কমার্সের ২৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১১টি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তার মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের টাকা গ্রাহকদের দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিউকমের ২৪ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে, আলেশা মার্টের ৯ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে, থলেডটকমের ১০ জন গ্রাহককে রিফান্ড করা হচ্ছে ৫ লাখ ৫২৮০ টাকা এবং বুমবুমডটকমের ১০ গ্রাহককে রিফান্ড করা হচ্ছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ২১৮ টাকা। আগামী সপ্তাহে আরও দুই একটা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের টাকা দিতে পারব। আরও তিন চারজন রয়েছে প্রসেসের মধ্যে। বাকি ১২ থেকে ১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

অনুষ্ঠানে ইক্যাব, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশ ও এসবির প্রতিনিধিসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং গ্রাহকরা উপস্থিত ছিলেন।