প্রতিনিধি, খুলনা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সবাইকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করতে হবে, যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র যাতে ফিরে আসে। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ যে সর্বনাশের খাদের কিনারে চলে গেছে, সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হব।
খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে গতকাল সোমবার দুপুরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর দেড়টায় তিনি বক্তব্য শুরু করেন, প্রায় ২৫ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আজ আমরা দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা করছি। দলকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই যে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের হাজারো নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, আমাদের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে, বিভিন্ন গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে, এখনও প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। কিন্তু কেন? সেই একটি কারণ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন বলতে পারেন দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে কী হবে? দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করলে দলে ভিত্তি যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি দল পরিচালনার দায়িত্ব যখন ধীরে ধীরে সঠিক ব্যক্তিদের কাছে ফিরে যাবে, যারা দলকে নেতৃত্ব দিলে দল সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারবে।
ঠিক একইভাবে দেশের ভেতরে যদি আমরা গণতান্ত্রিক চর্চা করি, ভোটের চর্চা করি, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করি সেই প্রতিনিধিদের, যারা জনগণের কথা বলবে, যারা জনগণের সমস্যার কথা বলবে। যারা দেশের সমস্যার কথা বলবে।’ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘অতীতে কী হয়েছে, আমরা দেখেছি। কীভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, কীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে আমরা শুনেছি। আমরা দেখেছি কিছুদিন আগেও কীভাবে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। আমাদের বহু সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট মাসে আমরা দেখেছি কীভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে। কীভাবে ১ হাজার ৪০০ মানুষ শহিদ হয়েছেন আজকের এই মুক্ত পরিবেশকে উপহার দেয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের থেমে থাকলে চলবে না, সামনে এগোতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘রাজনীতির একটি অংশ, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে, তর্ক হবে, বিতর্ক হবে। তবে আমাদের খেয়াল করতে হবে তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে দেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয়, যাতে করে সেই স্বৈরাচার হোক অথবা এমন হোক যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না, এমন কেউ সুযোগ পেয়ে যাক। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে আরও একটি বিষয়ে আমরা অযাচিত তর্ক-বিতর্ক করে জনগণ এবং দেশের স্বার্থরক্ষা থেকে যাতে দূরে সরে না যাই। আমাদের সামনে অনেক অনেক কাজ আছে।’
দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা আনতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, কৃষিব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। নজর দিতে হবে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি দিকে, সাধারণ মানুষ প্রতিদিন যুদ্ধ করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বা বাজার সিন্ডিকেট যেটাই বলি, এটার দিকে নজর দিতে হবে। এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কাজগুলো করতে হবে এবং এই কাজগুলো যদি না করি আমরা, এই দেশকে রক্ষা করা যাবে না। কাজগুলো আমাদের ঠান্ডা মাথায় বসে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। সঠিক ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে হবে, যারা দেশের মানুষের জন্য কাজগুলো করবে।’
রাষ্ট্রের সংস্কারের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আজ আমরা সংস্কারের কথা বলেছি। কিন্তু সংস্কার নিয়ে যদি প্রতিনিয়ত শুধু অবান্তর আলোচনা করতে থাকি, তাহলে আমাদের যে মূল কাজগুলো অর্থাৎ দেশের মানুষের সমস্যার সমাধান; সেটা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সমস্যার সমাধান হোক; সেটি নষ্ট রাস্তাঘাট ঠিক করার সমস্যার সমাধান হোক; আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজš§ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাব্যবস্থা, কৃষকদের কৃষিব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেটাই হোক না কেন, দূরে সরে যাব। যুক্তরাজ্যের মতো দেশের ৭৭ বছর লেগেছে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে। আমাদের দেশের কিন্তু এর ভেতরেই ৫০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আমরা হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতা বা সফলতার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছেছি। কিন্তু এখনও সম্পূর্ণভাবে সফল হতে পরিনি। এখনও সামনে অনেক কাজ বাকি আছে এবং এই যে কাজগুলো বাকি আছে, সেই কাজগুলো আমাদেরকে করতে হবে।’
দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির নেতা-কর্মীদের দিকে তাকিয়ে আছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘এখানে যারা হাজির, তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সৈনিক, আপনারা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কর্মী। দেশের অধিকাংশ মানুষ আজ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে, দেশে যদি একটি সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপিই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। সহকর্মীরা, এই আশা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সেই জন্য আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে তৈরি হতে হবে। আমাদের কথাবার্তা কাজকর্ম সবকিছুতে সেটির প্রতিফলন থাকতে হবে। দেশের মানুষ আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা করে, সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আমাদের কথাগুলোকে পৌঁছে দিতে হবে। দেশের মানুষ আমাদের দায়িত্ব দিলে সেই দায়িত্ব যাতে আমরা সফলভাবে পালন করতে পারি, তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম (মনা) সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলমের (তুহিন) সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন, দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। আরও বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম (বকুল), গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান প্রমুখ।