Print Date & Time : 29 August 2025 Friday 5:52 am

অর্থনৈতিক সংস্কার শেষে নতুন উচ্চতায় উঠবে পুঁজিবাজার

শেয়ার বিজ ডেস্ক : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার, বিচার কার্যক্রম এবং নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। অর্থনৈতিক সংস্কার চলছে। সংস্কার শেষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হবে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি একটা ব্রডার ইকোনমিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে আমাদের বাংলাদেশের ইকোনমি টেক অফ করে। ইকোনমির গ্রোথ যদি টেক অফ করে, তাহলে এর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে। যদি সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো হয়, আশা করা যায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটা নতুন উচ্চতায় উঠবে খুব দ্রুত। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে।

পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টকে গতকাল রোববার তিনি এসব কথা বলেন।

সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ডাকাতদের আড্ডাখানা হয়ে গেছে। এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেবল প্রতারণার শিকার হয়ে পুঁজি হারিয়েছেন। অতীতে যারাই পুঁজিবাজারের সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছেন, তারাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর তাঁবেদারি করেছে।

তিনি বলেন, একটা বড় বিষয় হচ্ছে যে, ঐতিহাসিকভাবে বিএসইসিতে বা বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের যে সংস্কারগুলো যারা করেছেন, তারা সবাই গোষ্ঠীস্বার্থের দিকে তাকিয়েছিলেন। এই গোষ্ঠীটা একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে। ফলে দেখা গেছে, যারা বড় বড় প্লেয়ার, তারা সবসময় বেনিফিটেড হয়েছেন। জেনারেল, যারা খুব ছোট ট্রেডার, যারা সেভারস, বলা যায় শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কিনে সেভিং করছেন, তারা সবসময় বেশিরভাগ সময় বেনিফিটেড হননি বা চিটেড হয়েছেন। তারা ম্যানিপুলেশনের শিকার হয়েছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ওই মিটিংয়ে এই ধরনের কথা, মানে এই ডিসকাশনটা খুবই জোরালোভাবে এসেছে যে, আসলে আমরা কেনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এটার কারণ হচ্ছে, পুরো শেয়ার মার্কেটটা হয়ে গেছে ডাকাতদের আড্ডা। পুঁজিবাজারে এই ডাকাত গেলে আরেকটা ডাকাত আসছে।

শফিকুল আলম বলেন, পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য আপনি যাকে নিয়ে আসছেন, সে আরেকটা ডাকাত। তো এই রিফর্মের জায়গায় প্রফেসর ইউনূস বলছেন, এখানে খুব স্ট্রং এবং খুব গভীর রিফর্ম করতে হবে। এই রিফর্মটা যে করবে, তারা হচ্ছে এই গোষ্ঠীস্বার্থের অনেক দূরের লোক। তারাই এসে করবে। তারা নির্মহভাবে রিফর্ম করবে। পুরো বিশ্বেই শেয়ার মার্কেটের খুব গভীর রিফর্ম হয়। ভালো জায়গায় যায়। কিন্তু তো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে যে, যারা রিফর্ম করতে চান, তারা আসলে আরেকটা ধান্দাবাজ গ্রুপ।

প্রেস সচিব যোগ করেন, এজন্য প্রফেসর ইউনূস গত মিটিংয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন যে, সেট অফ ফরেন এক্সপার্ট, যারা শেয়ার মার্কেট কীভাবে গ্লোবালি রিফর্ম করা যায়, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আনা যায়, সেটাই যেন খুব দ্রুত হয়, তাদের নিয়ে আসা হয়, এটার জন্য একটা তিন মাসের টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তারা এসে শেয়ার মার্কেটের কী কী করণীয়, সেটা তারা বলবেন এবং সে অনুযায়ী খুব দ্রুত অ্যাকশন নেয়া হবে।

এর ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি থাকবে না বলে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, কোনো গোষ্ঠী যেন মনে না করেন যে, এখান থেকে আমি আমার মতো করে টাকা বানাব। বছরের পর বছর হয়েছে, আমরা দেখেছি, আমাদের আশেপাশে যারাই একটু শেয়ারমার্কেটে ইনফ্লুয়েনশিয়াল পিপলের আশেপাশে ছিলেন, তারা সবাই কোটিপতি হয়ে গেছেন। সেই জায়গাটা যাতে না হয়, অর্ডিনারি শেয়ারহোল্ডারের জন্য ইন্টারেস্টটা প্রটেক্ট হয়। এই জায়গাটায় প্রফেসর ইউনূস বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন।

ব্যাংকিং খাতকে গহ্বর থেকে টেনে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা একদম দুর্বল ছিল। স্যার (ড. ইউনূস) বলেন, ব্যাংকিংয়ের অবস্থা ভূমিকম্পের মতো। সবকিছু লণ্ডভণ্ড অবস্থা। সেখান থেকে আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে একটা গহ্বর থেকে তুলে এনে পাহাড়ে ওঠানোর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ হলো কারেন্সি ফ্লোট করা হয়েছে, কিন্তু টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। এটার নির্দেশ করে, সংস্কার ভালো সংকেত দিচ্ছে।

সরকারের মেয়াদ শেষ হলে বিদেশি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হবে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, এটার দুটা কারণ আছে। একটা হচ্ছে, আমরা চিটাগাং পোর্টের ডিপ রিফর্ম করতে চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি যাতে ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানি চিটাগাং পোর্টকে ম্যানেজ করতে পারে। আমরা চিটাগং টার্মিনাল কাউকে দিচ্ছি না। চিটাগাং টার্মিনালে যাতে তারা ইনভেস্ট করেন, ম্যানেজ করেন। এখন পর্যন্ত আমরা তাদের কাছে রেসপন্স পেয়েছি, তারা তিন বিলিয়ন ডলারের মতো ইনভেস্ট করবে এবং এই চিটাগং পোর্টে যদি এফিশিয়েন্সি লেভেল দ্রুত এগিয়ে নিতে পারি, সেটার একটা মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট হবে পুরো বাংলাদেশের ইকোনমিতে।