নিজস্ব প্রতিবেদক : সূচকের সঙ্গে রেকর্ড গড়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে গতকাল মঙ্গলবার এ বাজারে লেনদেন হয় ২ হাজার ৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার, যা গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
এদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৭৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ২০১৩ সালে সূচকটি চালু হওয়ার পর এটিই সর্বোচ্চ অবস্থান। ডিএসইতে সোমবার লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা, যা রোববারের চেয়ে ১৯৭ কোটি টাকা বেড়েছে। আর গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হয় ২ হাজার ৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার। একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২০৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন পুঁজিবাজার নেতিবাচক ছিল। ফলে বাজারের ঊর্ধ্বগতি খারাপ নয়। তবে বিস্ময়কর বিষয় হলো, অর্থনীতিতে হঠাৎ এমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি, যাতে বাজার এভাবে বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজারের সূচক বেড়েছে, এটি ইতিবাচক। তবে এটি আরও সময় নিয়ে বাড়লে ভালো হতো। সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই বিশ্লেষক।
এদিকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। এতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী। তাই গত কয়েকদিনে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনের বড় উল্লম্ফন ঘটেছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে বর্তমানে বিনিয়োগের ‘স্বর্গ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, বাজার উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে চাইছেন। পাশাপাশি বড় মূলধনি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও তোড়জোড় শুরু হয়েছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাজারে। পরেও এ ধারা বিদ্যমান থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার স্টেকহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বৈঠক করে। যখন বাজারের মন্দাভাব ছিল, তখন গতিশীল বাজারের লক্ষ্যে বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী বাজারে নিরাপদ বিনিয়োগের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয় ওই বৈঠকে। এ লক্ষ্যে বাজারে যাতে কমপ্লায়েন্স (প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন) পরিপালন নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়Ñযাতে কোনো প্রতিষ্ঠানের সুশাসনের অভাবে পুরো বাজারের ক্ষতি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেয় বিএসইসি। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলেই বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে একমত হয় স্টেকহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় মোট ৩২৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২২৪টির, কমেছে ৮৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির শেয়ারদর।
এদিকে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৭৬ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৮৪ পয়েন্টে।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচক ও লেনদেন রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সিএসইতে ১১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে মোট ২৭৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৩টির, কমেছে ৭৫টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৭৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বারাকা পাওয়ারের ৫২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৪৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে যমুনা অয়েল। লেনদেনে এরপর রয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, এমজেএল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, কেয়া কসমেটিকস, সামিট পাওয়ার, ইসলামী ব্যাংক ও ডেসকো।