নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হƒদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসজনিত অসংক্রামক রোগ। এসব রোগ প্রতিরোধ না করা হলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য খাতের বাইরে যারা আছেন তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
গত মঙ্গলবার রাতে জুম প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স ও সিটিজেন নেটওয়ার্ক আয়োজিত ওয়েবিনারে এ অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা। সভায় ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের গবেষণা পরামর্শক অধ্যাপক আ ফ ম সারোয়ার।
অধ্যাপক সরোয়ার মূল প্রবন্ধে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইন সম্পর্কিত গবেষণার আলোকে বলেন, শরীরচর্চার খেলার মাঠ এবং উম্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করতে দেশে প্রায় ১৬টির মতো আইন রয়েছে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ৬টি এবং স্বাস্থ্যকর তাজা খাদ্য নিশ্চিতে ১১টি মন্ত্রণালয়ের ৩০টি বেশি আইন জড়িত। তবে এসব আইন প্রয়োগে স্বাস্থ্যের দিকগুলো গুরুত্ব পায় না। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অন্য মন্ত্রণালয়গুলো এগিয়ে এলেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। তারপরও আমাদের পুষ্টি ঘাটতির অন্যতম কারণ, স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার গ্রহণে উৎসাহী করতে না পারা। অনেকেই সবজি উৎপাদন করে সব পণ্য বিক্রি করছে; পরিবারের জন্য রাখছে না। গ্রামের নাগরিকদের বসতবাড়িতে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহী করা জরুরি। নগর কৃষির লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। স্কুলগুলোয় অস্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ বন্ধ করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়েও সভায় সুপারিশ করা হয়।
বক্তারা বলেন, আমাদের অধিকাংশ স্কুলে শরীরচর্চার শিক্ষক নেই, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়ার কেউ নেই। ভেজাল খাদ্য ও জাঙ্কফুডের কারণে আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। সভায় হƒদযন্ত্র ভালো রাখতে শরীরচর্চা বাড়ানো, স্কুলগুলোয় শরীরচর্চা কেন্দ্র বা শরীরচর্চার ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। বক্তারা সব স্কুলে শরীরচর্চা ও সাঁতার বাধ্যতামূলক করা এবং শরীরচর্চার বিষয়ে নম্বর যুক্ত করার সুপারিশ করেন। হেলথ এডুকেশন সেশনে স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরির বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিপণন ও বিজ্ঞাপন বন্ধ করারও সুপারিশ করা হয়। এছাড়া শহরে ইনডোরে শরীরচর্চা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং গ্রামে সুষম খাদ্য গ্রহণ বিষয়ে সচেতন বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ূন কবির, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোরশেদ মওলা, জাতীয় পুষ্টি পরিষদের উপপরিচালক নুসরাত জাহান, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিভাগীয় প্রধান ডা. আফসানা হাবিব শিউলী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বিএসএমএমইউর জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম আতিকুল হক, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিও অনকোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শুভ্রা দেবনাথ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেসিডেন্স সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-নোমান, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সাইফুল হাসান শামীম, বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিয়েশন অনকোলোজিসস কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ সাঈদ হোসাইন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক আলিয়া শাহনেওয়াজ, সিটিজেন নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।