পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখতে সংসদীয় কমিটির নির্দেশ

অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানে আইসিবির কাছে ব্যাখ্যা তলব

আতাউর রহমান: নীতিমালা লঙ্ঘন করে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন করেছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। ফলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ আদায় হচ্ছে না, এতে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। এ নিয়ে গত ২০ অক্টোবর ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদনে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয় এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে আইসিবির কাছে দলিলসহ ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি এ বিষয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোম্পানিকে চিঠিতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারকে সুসংহত করতে আইসিবিকে সংসদীয় কমিটির নির্দেশ প্রসঙ্গে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত বিষয়ে আইসিবিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ধারা ১১ (২) এর অধীনে সাত কার্যদিবসের মধ্যে উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় দলিলসহ ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ জানানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিতে শেয়ার বিজ থেকে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির চিঠির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে কোম্পানির সচিব রুকসানা ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং কোম্পানির নির্ধারিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। 

এর আগে ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উল্লেখিত সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, মো. মাহবুবউল আলম হানিফ, মুহিবুর রহমান মানিক ও নাহিদ ইজাহার খান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের জানান, সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে ব্যর্থ হচ্ছে আইসিবি। আইসিবির ঋণ আদায়ের হার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি জানান, অডিট আপত্তির সংখ্যাও বেশি। এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির পক্ষ থেকে ওই সব ঋণ অনুমোদনে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ঋণ আদায়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৩১ মার্চ ২০২১-২২ সমাপ্ত হিসাব বছরে আইসিবির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানির সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৪৮ পয়সা। ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে কোম্পানির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ১ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ২৫ পয়সা। সে সময় কোম্পানির সমন্বিত শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৫৫ টাকা ৮৭ পয়সা।

আইসিবি ১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৮০৫ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কোম্পানির রিজার্ভে রয়েছে ২ হাজার ৮৮৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আইসিবির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮০ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৫২৭টি। এর মধ্যে ৬৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে, ২৭ শতাংশ সরকারের কাছে, ১ দশমিক ৯২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে এবং ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।