অস্ত্র জমা না দিয়ে পালিয়েছে শামীম ওসমান

আবদুর রহিম, নারায়ণগঞ্জঃ অস্ত্র জমা না দিয়ে শামীম ওসমান স্ব পরিবারে দেশত্যাগ করেছেন বলে চাউর হয়েছে। ইতোমধ্যে দিল্লিতে নিজামুদ্দিন(রঃ) মাজারে শামীম ওসমানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। সরকার ঘোষিত নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেও শামীম ওসমান ও তাঁর পরিবারের অস্ত্র জমা পড়েনি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে শামীম ওসমান ও তাঁর অনুসারীদের অস্ত্রগুলো কোথায় গেলো? গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এখনও ৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি।

অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে দেওয়া ১৯১টি অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে ১০২টি শটগান ও বন্দুক, ৬৭টি পিস্তল, ১৪টি রাইফেল ও আটটি রিভলভার। এই সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৩৬টি অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এখনো ৫৫টি অস্ত্র জমা পড়েনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৭৩৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার মেয়াদে মোট ৩২১টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

অস্ত্র জমা না দেওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ও শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু। অস্ত্র জমা না দেওয়ার তালিকায় নাম রয়েছে এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীরও।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ অক্টোবর শামীম ওসমানের নামে পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তিনি এই রাইফেলের লাইসেন্স একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর নবায়নও করেছেন। গত বছরের ২৬ অক্টোবর একটি এনপিবি পিস্তলের লাইসেন্স নেন তিনি। কিন্তু অন্তর্র্বতী সরকারের ঘোষণার পর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তিনি অস্ত্র দুটি জমা দেননি। সেই কারণে তার অস্ত্র দুটি অবৈধ হিসেবে বর্তমানে জেলা প্রশাসনের তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছে।

তার ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানও তার আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি। ২০২০ সালের ১ মার্চ তার নামে একটি পিস্তল ইস্যু করা হয়। তার নামে ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আরেকটি পিস্তলের লাইসেন্সও দেওয়া হয়। সেটিও তিনি জমা দেননি। তার শ্যালক ও বিসিবির সাবেক পরিচালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর নামে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। গত বছরের ৫ নভেম্বর পয়েন্ট ২২ বোরের একটি এনপিবি পিস্তলেরও লাইসেন্স পান তিনি। অস্ত্র দুটি তিনি এখনও জমা দেননি। শামীম ওসমানের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর) ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলুও তার লাইসেন্সপ্রাপ্ত শটগানটি এখনও জমা দেননি।

নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি, তাদের ওই অস্ত্রগুলো অবৈধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলছে। গত ১৯ জুলাই শামীম ওসমান ও তাঁর অনুসারীদের প্রকাশ্যে ভারী অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালাতে দেখা গেছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ওসমান পরিবার নিয়ে নতুন করে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ৪ আগস্টের পর শামীম ওসমান, তাঁর অনুসারীদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।