শেয়ার বিজ ডেস্ক : ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং সৌদি আরবে বিক্রি বাড়ায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জার্মানির অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ইউরোয়। খবর: ডয়চে ভেলে।
গত বছর ইউক্রেনে রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরো করা হয়। এর মধ্যে লেপার্ড দুই ব্যাটল ট্যাংক ছিল। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অস্ত্র বিক্রির এই পরিমাণ ৩০ শতাংশ বেশি। গত রোববার দেশটির অর্থনীতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানায় ডয়চে ভেলে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ জুনের মধ্যে জার্মানির সরকার অন্তত ৭ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করেছে। ১৮ জুন নাগাদ আগের বছরের তুলনায় অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর অস্ত্র বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়বে ইউরোপের দেশটি।
জার্মানির অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ গত বছরও সর্বকালের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছিল। সেবছর ১২ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করে দেশটি। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়।
এর মধ্যে ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর মতো ছিল সমরাস্ত্র এবং ৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ইউরোর ছিল অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ওলফ শলৎসের জোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই সময় অবশ্য ঘোষণা দিয়েছিল, অস্ত্র রপ্তানি কমিয়ে আনা হবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং ন্যাটো সদস্য নয়, এমন দেশের ক্ষেত্রে এ নীতি প্রযোজ্য হবে। জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, পরিবেশবান্ধব গ্রিন পার্টি এবং ব্যবসাবান্ধব উদারগণতন্ত্রী দল এফডিপির গড়া জোট সরকার অস্ত্র রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার আনার পরিকল্পনা করেছিল।
শলৎস সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস পর রাশিয়ার ট্যাংক ইউক্রেনে প্রবেশ করে। ফলে অস্ত্র রপ্তানির ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপের জার্মানির পরিকল্পনা বাক্সবন্দি হয়।
নতুন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দুই-তৃতীয়াংশ অস্ত্রই ইউক্রেনে রপ্তানি করা হয়েছে। চলতি বছর এরই মধ্যে ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠিয়েছে শলৎস সরকার।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের প্রথম বছরে বার্লিন কিয়েভে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করে। এরমধ্যে আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং ভারী কামান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত বছর ইউক্রেনে রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরো করা হয়। এর মধ্যে লেপার্ড দুই ব্যাটল ট্যাংক ছিল। ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর জার্মানির অবস্থান।
জার্মানি যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করছে, তার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর (১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ইউরো), ভারত (১৫৩ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ইউরো), সৌদি আরব (১৩২ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ইউরো) এবং কাতার (১০০ মিলিয়ন ইউরো)।
গত বছরের জুলাইয়ে বার্লিন রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করলে দেশটি এ তালিকায় চলে আসে। ২০১৮ সালে সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশগোজি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করে জার্মানি। উল্লেখ্য, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। স্থগিতাদেশের আরেকটি কারণ ছিল ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের সম্পৃক্ততা। রিয়াদ অবশ্য তারপর প্রতিবেশীদের প্রতি নমনীয় হয়েছে।
সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি আবার শুরুর ক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে অন্যান্য ন্যাটো এবং ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের অংশীদারিত্বে চলা প্রকল্পগুলোকে বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মানির মন্ত্রণালয়।
বামপন্থি পপুলিস্টদের জোট স্যারা ভাগেনক্নেশ্ট অ্যালায়েন্সের রাজনীতিবিদ সেভিম ড্যাডেলেনের অনুরোধের ভিত্তিতে অস্ত্র রপ্তানির বিস্তারিত প্রকাশ করে অর্থনীতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ড্যাডেলেন ‘যুদ্ধ এবং সংকটপূর্ণ অঞ্চলে’ অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ব্যাপার বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি শলৎস জোটের বিরুদ্ধে নির্বাচনকালীন প্রতিশ্রæতি ভঙ্গের অভিযোগও এনেছেন।