Print Date & Time : 31 August 2025 Sunday 2:15 am

অস্থিতিশীল পুঁজিবাজার, রাশেদ মাকসুদ কি পদত্যাগ করছেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে মূল্য পতনের ধারাবাহিকতায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা তার পদত্যাগের দাবি জোরালোভাবে তুলতে শুরু করেছেন। এই উত্তাল অবস্থার মধ্যে আজ সোমবার (১৯ মে) তিনি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসবেন, যেখানে অনুমান করা হচ্ছে যে তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে একটি পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন।

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাশেদ মাকসুদ বৈঠকের জন্য ১০ মিনিটের একটি সময় বরাদ্দ পেয়েছেন; বৈঠকটি সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, ‘ব্যক্তিগত অসুবিধা’ উল্লেখ করে তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয় বলে আর্থিক উপদেষ্টার কাছে তার ইচ্ছাপত্র হস্তান্তর করবেন।

গত ১৮ আগস্ট সরকার তাকে বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের পর কমিশনের অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন রাশেদ মাকসুদ। দুর্নীতির অভিযোগে এ বছরের প্রথম দিকেই সিকিউরিটিজ বিভাগের ১৬ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়; এই কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

তবে কঠোর অবস্থানের পরও পুঁজিবাজারে কোনো স্থিতিশীলতা গড়ে ওঠেনি; বরং অপরিসীম দরপতনে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গেছে গত রোববার (১৮ মে) মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে, যেখানে ‘কফিন মিছিল’ ও গায়েবানা জানাজার মতো ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন। তারা জানান, বাজার ধসে অনেকে সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়েছেন, কেউ কেউ এমন বিপাকগাহিতে পতিত হয়েছেন যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে।

রাশেদ মাকসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে যে তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে অপর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। এমনকী একবার তিনি বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের হুমকি দিয়েছেন যাতে কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন শুরু না করে এবং নেতিবাচক সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচার না পায়।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের ‘পুঁজিবাজার রক্ষা আমাদের কাজ নয়’ মন্তব্য নিয়েও ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তাদের দাবি, দেশের অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাত রক্ষায় কেন্দ্রিয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থারই দায়িত্ব রয়েছে।

আগামী কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যদি বাজারের এই ধস থামানো না যায়, তাহলে বড় ধরনের আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, বাধ্যহীনতায় তারা কফিন নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন এবং দাবি আদায় না হলে আন্দোলনের মাত্রা আরও বাড়বে। তাদের একমাত্র দাবি—তৎক্ষণাৎ খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।