নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকসানে ডুবছে আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড। গত বছর ৯ মাসে এক্সচেঞ্জ হাউসটি লোকসান করে আড়াই কোটি টাকার বেশি। অথচ এ লোকসানি এক্সচেঞ্জ হাউস দেখার নামে লন্ডনে আট দিনের বিলাস ভ্রমণে যাচ্ছে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড। আর এই ভ্রমণে খরচ হবে প্রায় ৬৬ লাখ টাকা। এ বিষয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শেয়ার বিজে ‘লোকসানি এক্সচেঞ্জ হাউস দেখার নামে আইএফআইসি বোর্ডের লন্ডন বিলাস!’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের লন্ডন ভ্রমণের বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৭ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয়। আইএফআইসি গতকাল এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য সরবরাহ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যুকৃত চিঠিতে বলা হয়, দৈনিক শেয়ার বিজ নামীয় বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘লোকসানি এক্সচেঞ্জ হাউস দেখার নামে আইএফআইসি বোর্ডের লন্ডন বিলাস!’ শীর্ষক ফিচারটির প্রতি দৃষ্টি আকষর্ণ করা যাচ্ছে। আপনাদের ব্যাংকের কতজন সদস্য, কোন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে, কী কারণে যুক্তরাজ্য লোকসানি সাবসিডিয়ারি ‘আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড’ দেখতে যাচ্ছেন, তার সাপোর্টিং তথ্যসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে দাখিল করার জন্য পরামর্শক দেয়া হলো।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। ব্যাংকটি যথাসময়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। পরে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ সূত্রমতে, লোকসানে ডুবতে বসা আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড ২০২৪ সালের ৯ মাসে লোকসান দিয়েছে আড়াই কোটি টাকার বেশি। অথচ এ লোকসানি এক্সচেঞ্জ হাউস দেখার নামে লন্ডনে আট দিনের বিলাস ভ্রমণে যাচ্ছে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড। এজন্য ব্যাংকের অর্থে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, চার পরিচালক ও কোম্পানি সচিব। যদিও চেয়ারম্যানসহ তিন পরিচালকই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার নন।
এদিকে লন্ডনে যাওয়া-আসা ও থাকাকালে আট দিনের জন্য তারা নেবেন মোটা অঙ্কের টিএ/ডিএ বিল। এভাবেই প্রায় ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় করবে আইএফআইসির পরিচালনা বোর্ড। যদিও ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এক্সচেঞ্জ হাউসটির জন্য নিয়মিতই লোকসান গুনতে হচ্ছে আইএফআইসি ব্যাংককে। সূত্রমতে, গত ৮ জানুয়ারি আইএফআইসি ব্যাংকের ৯০৬তম বোর্ড সভায় লন্ডন এক্সচেঞ্জ হাউস পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। অথচ গত বছর শেষ ৯ মাসে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৬ পাউন্ড লোকসান করেছে। বাংলাদেশি টাকায় প্রতি পাউন্ড ১৫১ টাকা দরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
সূত্রমতে, চলতি মাসে এক্সচেঞ্জ হাউসটি দেখতে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেন, পরিচালক মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম, মো. গোলাম মোস্তফা ও মো. মনজুরুল হক। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ প্রথম তিনজনই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার নন। আর বাকি দুই পরিচালক সরকারের প্রতিনিধি। লন্ডন বিলাসে প্রত্যেকের জন্য বিমান ভাড়ায় ব্যয় হচ্ছে চার লাখ ৪৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ পরিচালনা পর্ষদের ছয়জনের জন্য বিমান ভাড়াতে ব্যাংকের ব্যয় হবে ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া কোম্পানি সচিব মোকাম্মেল হকের বিমান ভাড়াও ব্যাংক বহন করবে।
ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, যাওয়া-আসা ও লন্ডনে ছয় দিন অবস্থানসহ মোট আট দিনের জন্য টিএ/ডিএ ভাতা নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও পাঁচ পরিচালক। চেয়ারম্যান প্রতিদিনের জন্য টিএ/ডিএ ভাতা নেবেন এক হাজার ১০০ ডলার করে। অর্থাৎ আট দিনে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন টিএ/ডিএ বিল নেবেন আট হাজার ৮০০ ডলার। আর প্রত্যেক পরিচালক প্রতিদিনের জন্য ৮৫০ ডলার করে টিএ/ডিএ ভাতা নেবেন। এতে প্রত্যেক পরিচালক টিএ/ডিএ বিল নেবেন ছয় হাজার ৮০০ ডলার করে। চেয়ারম্যান ও চার পরিচালক মিলে মোট টিএ/ডিএ বিল নেবেন ৩৬ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২২ টাকা দরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এতে বিমান ভাড়া ও টিএ/ডিএ বিল মিলিয়েই ব্যয় হচ্ছে ৬৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া কোম্পানি সচিবও ব্যাংকের নির্ধারিত হারে আট দিনের জন্য টিএ/ডিএ বিল নেবেন।
এদিকে আইএফআইসি মানি ট্রান্সফারের (ইউকে) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের (এপ্রিল-ডিসেম্বর) ৯ মাসে আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার আয় করে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৫৪ পাউন্ড। আর ৯ মাসে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল তিন লাখ তিন হাজার ৩৫০ পাউন্ড। এতে ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দাঁড়ায় এক লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৬ পাউন্ড বা প্রায় ২ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এরপরও এক্সচেঞ্জ হাউসটি দেখতে যাওয়ার নামে ব্যাংকের অর্থ অপচয় বলে মনে করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা।