Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 3:54 pm

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি বছরের চার মাসই বিদেশে!

শেখ আবু তালেব: দেশের প্রথম সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে প্রতিষ্ঠিত আইএফআইসি ব্যাংক। গত ৯ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাংকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মাদ শাহ আলম সরোয়ার। প্রভাবশালী এ ব্যাংকারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবেও দেখতে চায় একটি পক্ষ। কিন্তু তার দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি বছরের চার মাসই বিদেশে অবস্থান করেছেন। বিয়য়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। এজন্য প্রভাবশালী এ ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মৃদু অভিযোগও তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার ঘনঘন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরো ব্যাংক খাতে। বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে প্রজ্ঞাপন পর্যন্ত জারি করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের চার মাসই বিদেশে কাটিয়েছেন তিনি। বছরটিতে মোট ২১ বার বিদেশ সফর করেছেন, যা ব্যাংক খাতে রেকর্ড তৈরি করেছে। এতে ব্যাংকের পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হওয়া, সার্বিক কর্মকাণ্ডে গতি কমে যাওয়া ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিদেশ সফর-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এতবার বিদেশ সফর করতে তিনি মোট ছুটি কাটিয়েছেন ১১৭ দিন। এভাবে বছরের তিন ভাগের এক ভাগ সময়, অর্থাৎ চার মাসই বিদেশে ছিলেন। এ সময় তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন টানা ২১ দিন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটিও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এক মাসের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ই তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। আর কার্যদিবস বিবেচনায় তিনি পুরো মাসই বিদেশে কাটিয়েছেন। বর্তমানে একটি ব্যাংকের কার্যদিবস হচ্ছে ২২ দিন। মাসের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন হিসাবে আট দিন ব্যাংক বন্ধ থাকে।

কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু ঘনঘন ও লম্বা ছুটি নিয়ে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিদেশ সফর ক্ষতিকর। তার এমন বিদেশ সফরে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য, পরিচালনগত ঝুঁকি ও সার্বিক গতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর এত বিদেশ সফর নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের অভ্যন্তরেও সমালোচনার জš§ হয়েছে। বিষয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।

জানা গেছে, ব্যাংকের কর্যক্রমে ক্ষতি হওয়া ও বিশৃঙ্খলা তৈরির শঙ্কায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিদেশ সফরের লাগাম টানতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, কতিপয় ব্যাংক-কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস কিংবা ব্যক্তিগত ছুটিতে দীর্ঘদিনের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এতে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা হ্রাসের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনগত ঝুঁকিসহ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আইএফআইসি ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অফিশিয়াল বা ব্যক্তিগত কাজে দীর্ঘদিনের জন্য দেশের বাইরে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের জন্য ছুটিতে থাকতে বিশেষ অনুমোদন নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশে অবস্থান প্রসঙ্গে আইআইএফসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগযোগের চেষ্টা করেন এ প্রতিবেদক। ব্যাংকের দাপ্তরিক ও তার ব্যক্তিগত ফোন এবং মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, দেয়া হয় একাধিক এসএমএস। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয় একাধিকবার। আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবেদকের উপস্থিতির বিষয়টিও অবহিত করা হয় তাকে। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি তাকে বিষয়টি আবার জানিয়ে এসএমস দেয়া হয় একাধিক মাধ্যমে। কিন্তু সর্বশেষ গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত তার বা ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উত্তর আসেনি এ প্রতিবেদক বা শেয়ার বিজ অফিসে।

প্রসঙ্গত, প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। বর্তমানে ব্যাংকটির মালিকানার অংশীদার হিসেবে রয়েছে রাষ্ট্র। মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশই রাষ্ট্রীয় মালিকানায়। অবশিষ্ট শেয়ারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ১৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, ২১ দশমিক শূন্য আট শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এবং উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ। সর্বশেষ ব্যাংকটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৬ টাকা ৯০ পয়সায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি এখনও নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ গত বছর বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এ সময়ে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ১১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।