গবেষণায় ক্যাপাসিটি চার্জকে ‘লুটেরা মডেল’

আইএমইডির উপসচিব সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের প্রকল্প পরিবীক্ষণ করার একমাত্র সংস্থা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ খাত নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ওই গবেষণাপত্রে বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়, সেটিকে ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যদিও আইএমইডি পরে জানায় যে, গবেষণাপত্রে ভুল হয়েছে। তবে এ গবেষণাপত্র প্রণয়ন করে শাস্তির মুখে পড়েছেন সংস্থাটির দুই কর্মকর্তা। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট ওই দুই কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। পরে একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আইএমইডির ওই গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। বিদ্যুৎ খাতের ৬৭টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ক এ গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে শেয়ার বিজসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সরকারপ্রধানও কথা বলেন। সবশেষে গবেষণার সঙ্গে জড়িত দুই সরকারি কর্মকর্তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে আইএমইডির সেক্টরের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ মাহিদুর রহমানকে (উপসচিব) চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আর একই সেক্টরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা এসএম হামিদুল হককে (অতিরিক্ত সচিব) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তার চাকরির মেয়াদ বেশি দিন না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে  দুইজন কর্মকর্তাকেই ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

মাহিদুর রহমানকে বরখাস্ত করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের বাস্তবায়ন পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপসচিব)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেহেতু সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২(১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা প্রয়োজন করেছে, সেহেতু উক্ত বিধিমালা অনুযায়ী মোহাম্মদ মাহিদুর রহমানকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

এর আগে ওই দুই কর্মকর্তাকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইএমইডির সেক্টরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা এসএম হামিদুল হক (অতিরিক্ত সচিব) এবং একই সেক্টরের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ মাহিদুর রহমানকে (উপসচিব) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অবমুক্ত করা হলো। সংস্থাটির প্রশাসন বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মইনউদ্দিনের স্বাক্ষর রয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

এর আগে গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মুখে এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল আইএমইডি। এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের মতো করে কাজ করেছে। আর আইএমইডির প্রতিবেদন প্রস্তুতে প্রধানমন্ত্রী সংস্থাটিকে আলাদাভাবে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। আইএমইডির প্রতিবেদনে কিছু ব্যত্যয় ছিল বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। আর এ বিষয়ে আইএমইডির বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল উল্লেখ করে এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।

সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে সরকারপ্রধান বিষয়টি উল্লেখ করে সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। গত মঙ্গলবার একনেক সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, প্রতিবেদনটিতে ক্যাপাসিটি চার্জকে ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৪ বছরে এ বাবদ ৯০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা গেছে বলেও জানানো হয়। ৮ জুলাই শেয়ার বিজে প্রকাশিত “বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ ‘লুটেরা মডেল’!” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পরের দিন আইএমইডির প্রতিবাদও ছাপানো হয়। এ খাতের দায়মুক্তি আইনেরও সমালোচনা করা হয় প্রতিবেদনে। পরে অবশ্য এসব মন্তব্যকে প্রতিবেদনের অংশ নয় বরং পত্রিকার অংশ ভুল করে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছিল আইএমইডি। এসব নিয়ে গত কয়েকদিন সরগরম ছিল আইএমইডি।