আইএমএফের বিবৃতি: বাংলাদেশের রিজার্ভ ও বিনিময় হার মোটামুটি স্থিতিশীল

বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ও বিনিময় হার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে এবং রিজার্ভের পরিমাণ তাদের পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটির প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর শেষে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আইএমএফের চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বসন্তকালীন বৈঠকের পর জানা যাবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ।
সফর শেষে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার রাজস্ব আদায়ে কর সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন ও ব্যাংক খাত সংস্কারে জোর দিয়েছে।

আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থানের সতর্ক পুনঃসমন্বয় মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস পূরণে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে দেশের রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা শক্তি বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন সম্ভব হবে এবং বৈশ্বিক আর্থিক ঝুঁকির বিরুদ্ধে দেশের অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হবে।

ক্রিস পাপাজর্জিও আরও বলেন, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। অপ্রয়োজনীয় কর সুবিধা তুলে দিয়ে একটি সহজ ও কার্যকর কর কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এতে রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিশ্চিত হবে।

আইএমএফ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ও বিনিময় হার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে এবং রিজার্ভের পরিমাণ তাদের পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বহিরাগত অর্থায়নের ঘাটতি মোকাবিলা ও চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্বল্পমেয়াদি নীতিগত কড়াকড়ি আরোপ অপরিহার্য বলে মনে করে আইএমএফ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও তা এখনও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। মূল্যস্ফীতি (৯ দশমিক চার শতাংশ) এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের আলোচনা চলমান। বাংলাদেশও সঠিক পথে আছে। বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে আগামী জুনে সিদ্ধান্ত হবে।

তারা জানায়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ টানতে সুশাসন নিশ্চিত জরুরি। জুনে আইএমএফের বোর্ড মিটিং আছে। সেখানেই বাংলাদেশকে দেয়া চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

এ বিষয়ে আইএমএফের মিশন প্রধান পাপেজোরজিউ বলেন, স্বচ্ছতা, সুশাসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ব্যাংক খাতে সুসংগঠিত সংস্কার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সুশাসন ও স্বচ্ছতা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে ও রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জলবায়ু-সহনশীল অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

আইএমএফের মিশনপ্রধান বলেন, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে তিন দশমিক তিন শতাংশে, যেখানে গত অর্থবছরে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচ দশমিক এবং শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে মার্চে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক চার শতাংশ। তবে এটি এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত পাঁচ-ছয় শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।

আইএমএফ বলেছে, বড় আকারের বৈদেশিক অর্থায়নের ঘাটতি পূরণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর সংস্কারের ত্বরান্বিত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিনিময় হারে নমনীয়তা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের দিকেও দৃষ্টি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

সফরকালে আইএমএফের প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তারা বেসরকারি খাত, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে।