আইএমএফ ঋণ: ডলার সংকটের স্বস্তির আশা

এম মাসুমঃ: সাধারণত যখন কোনো দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় রকমের ঘাটতি তৈরি হয় তখন তারা আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যখন কোনো দেশ ঘাটতিতে পড়ে। যখন বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষত ডলারের ঘাটতি তৈরি হয় তখন আইএমএফ ঋণ দিয়ে থাকে। একটা দেশের যখন আর কোনো উপায় থাকে না তখন তারা আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। আইএমএফ তাদের কার্যক্রমের আওতাভুক্ত দেশগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয় এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অর্থায়ন করে থাকে। এসব সহযোগিতা তারা দিয়ে তাকে বিভিন্ন শর্তে। সংস্থাটি ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আর্থিক খাতে নীতিগত বিষয়ে সংস্কারের কিছু শর্তও দিয়ে থাকে, যা পূরণ করতে গেলে সরকারের অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়।

বিশ্বের প্রায় সব দেশই মার্কিন ডলারে বেশি রিজার্ভ রাখে। এখন তা আগের চেয়ে একটু কমে এসেছে। এ অবস্থায় ডলারের কদর পুনরুদ্ধারে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর সুদের হার ক্রমাগতকভাবে বাড়িয়েই চলেছে। আইএমএফের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর বিশ্বের সব দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ১২ লাখ ৯২ হাজার কোটি ডলার। গত সেপ্টেম্বরে তা কমে ১১ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এক বছরে রিজার্ভ কমেছে এক লাখ ৩২ হাজার কোটি ডলার। বিশ্বের ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণ ডলারে অনুমোদিত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় প্রায় সব দেশের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দায় রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে বিনিয়োগ। এসব কারণে রিজার্ভ কমেছে।

স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৩ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাংলাদেশের লেনদেনে মধ্যবর্তী মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং। তখন পর্যন্ত বিনিময় হার ওঠানামা করত পাউন্ডের বিপরীতে। এর পর থেকে বাংলাদেশ মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে পাউন্ডের পরিবর্তে বেছে নেয় ডলারকে। সেই শুরু ডলারের ওপর নির্ভরতা। সেই ডলারই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহƒত মদ্রা। নানা সময়ে ডলারের আধিপত্য ভাঙা নিয়ে আলোচনা ও উদ্যোগ হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরও শক্তিশালী হয়েছে এই মার্কিন মুদ্রা। আর এই শক্তিশালী মুদ্রাই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্র করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯৮ শতাংশই ডলারে সম্পন্ন হয়। তাই ডলারই নির্ধারণ করে দেয় দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় গত বছরের মার্চ থেকে ডলারের সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। দেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় যা হয়, তার চেয়ে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এর ফলে ডলারের সংকট হয়ে দাম বেড়ে যায়, যার প্রভাবে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতিও।

গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২১ টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি করেছে। যা পুরো অর্থনীতিকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ডলারের চাপ কমাতে বিকল্প মুদ্রায় এলসি খোলার উদ্যোগ নিলেও সাফল্য আসেনি। অন্য দেশগুলো নিজেদের মুদ্রাকে অবমূল্যায়ন করে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। তবে এ পথে না গিয়ে বাংলাদেশ টাকাকে শক্তিশালী করে রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিকই টাকা মান হারায়। যার ফলে সংকট আরও প্রকট হয়। ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা। 

দেশে ডলার-সংকট মেটাতে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ফলে দেশে এখন প্রতি মাসে গড়ে যে পরিমাণ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আসছে, আমদানি খরচ হচ্ছে তার চেয়ে কম। এরপরও সংকট রয়ে গেছে। কারণ, আমদানির জন্য বিদেশি ব্যাংকগুলো আগে যে অর্থায়ন করেছে, তার দায় এখন শোধ করতে হচ্ছে। এতে সুদও বেড়ে গেছে। আবার সরকারি-বেসরকারি খাতে ঋণ পরিশোধ, বিদেশি কোম্পানির মুনাফা প্রত্যাবাসন, বিমানভাড়া, চিকিৎসা সেবাসহ নানা খরচ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার এখন যারা ঋণপত্র খুলছে, তাদের বেশির ভাগ দায় পরিশোধে ছয় মাস পর্যন্ত সময় নিচ্ছে। সুতরাং শিগগিরই সংকট কেটে যাবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

২০২২ সালে রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানি দায় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। গত জুলাই ২০২২ থেকে জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সাত মাসে রিজার্ভ থেকে ৯২০ কোটি ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে এর আগে পুরো এক অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার কখনও বিক্রি করা হয়নি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। 

গত ৫ জুলাই ২০২২ এলসি খোলার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহƒত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, প্রসাধনী, স্বর্ণালঙ্কার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সামগ্রী বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স, পানীয়সহ বেশকিছু পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ সুবিধা পাবেন না আমদানিকারকরা। এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। তবে শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত-সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। 

আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরায় কমতে শুরু করেছে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পণ্য আমদানির হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র বা এলসি খোলা কমেছে ২৬.৫০ শতাংশ। আর একই সময়ে নিষ্পত্তি কমেছে ১.৫৬ শতাংশ। রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমদানির দায় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এলসি কমলেও আগের দায় পরিশোধের চাপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি।

বাংলাদেশের আমদানিকারকরা গত কয়েক মাস ধরেই অভিযোগ করেছেন, ডলার সংকটের কারণে একাধিক ব্যাংকে যোগাযোগ করেও তারা ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে অনেক জরুরি পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে এগুলোর দাম বাড়ছে। আসন্ন রমজানে অনেক খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্যে ভোগ্যপণ্য অলমোস্ট ১ কোটি ৬০ লাখ টনের মতো আমাদের ইমপোর্ট করতে হয়। ব্যবসায়ীরা বলছে, আমদানি করতে গেলে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর যে চাপ আছে তার জন্য ব্যাংকগুলো যেমন অনীহা প্রকাশ করছে ও তাদের পেমেন্টগুলো পরিশোধ করতে পারছে না বিধায় তারা আগের চেয়ে এলসি  খুলতে অনুৎসাহিত বোধ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ১ জানুয়ারি ২০২৩ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা আছে, যা আইএমএফ রিজার্ভের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে। বর্তমান রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি ডলার বাদ দিলে তাতে নিট রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে। ঋণ পরিশোধ; বিদেশ থেকে পণ্য, কাঁচামাল আমদানিসহ আন্তর্জাতিক প্রায় সব ধরনের লেনদেনে রিজার্ভে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে গেলে আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়। এতে অর্থনীতির গতি কমে যায়। এছাড়া রিজার্ভ কমে গেলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধেও বিলম্ব হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী ও পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব পাস হয়েছে বলে জানা যায়। ফলে বাংলাদেশ পাচ্ছে সাড়ে তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার। মোট সাত কিস্তিতে প্রতিশ্রুত অর্থের প্রথম কিস্তি ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ডলার পাওয়া যাওয়ার কথা এ ফেব্রুয়ারি বা পরের মাস মার্চে। অর্থনীতির ক্রান্তিকালে আইএমএফ এ ঋণ দিয়ে পাশে দাঁড়ানোয় এক ধরনের দম পাবে বাংলাদেশ।

আইএমএফ থেকে অর্থ চাওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে অভূতপূর্ব হারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কোভিডের ক্ষত সারিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন বিপদ হিসেবে আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। প্রায় এক বছরে চাল, গম, ভুট্টা, সার, ভোজ্যতেলের মতো নয়টি পণ্যে বাড়তি গুনতে হয় ৭৬০ কোটি ডলার। আর আমদানিতে নাটকীয় উত্থান হয় দেশে। ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে আমদানি বাড়ে আগের তুলনায় ৩৯ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতিও দাঁড়ায় ২ হাজার ৮২৩ কোটি ডলারের। এছাড়া চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয় ১ হাজার ৭২৩ কোটি ডলার। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ২৭৮ কোটি ডলার।

ঋণ চাওয়ার পেছনে সরকার আইএমএফকে আরও জানায়, প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকে বিশ্বের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশে পরিণত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ হারাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ, আর শেষ দিকে হারাবে জিডিপির ৯ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ১০০ বছরের ডেলটা পরিকল্পনার পাশাপাশি পাঁচ বছর মেয়াদি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ জন্য জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ অর্থ লাগবে।

আইএমএফ থেকে নেয়া ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হবে বাজারের প্রচলিত সুদের হারের ভিত্তিতে। মোট ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ তিন ধরনের ঋণ পাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)।

যেসব দেশ বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতায় ভোগে অর্থাৎ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে, আইএমএফ তাদেরই ইসিএফের আওতায় ঋণ দেয়। ইসিএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ১০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এ জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। যেসব দেশ অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে লম্বা সময় ধরে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতায় ভোগে, তাদের ঋণ দেয় ইএফএফ থেকে। ইএফএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ২১৫ কোটি ডলার। আর আরএসএফের আওতায় আইএমএফ ঋণ দেয় সেসব নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশকে, জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনাভাইরাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যাদের কষ্ট হচ্ছে। আরএসএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ১৩০ কোটি ডলার। তিনটির গড় ঋণের সুদ হবে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশের মতো। তিন ধরনের ঋণের মধ্যে আরএসএফের ১৩০ কোটি ডলার পরিশোধে বাংলাদেশ সময় পাবে ২০ বছর। তবে ১০ বছরের একটা গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে। প্রথম ১০ বছর অবশ্য কোনো ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না। একাদশ বছর থেকে পরিশোধ করতে হবে এ অংশের কিস্তি।

ইসিএফ ও ইএফএফের বাকি ৩২০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে বাংলাদেশ সময় পাবে ১০ বছর। এ অর্থ দুই ভাগে পরিশোধ করা যাবে এবং আলাদা আলাদা গ্রেস পিরিয়ড থাকবে এখানেও। যেমন ইএফএফের ঋণ সাড়ে ৪ থেকে ১০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। এর জন্য সাড়ে ৩ বছর পর্যন্ত কোনো ঋণ পরিশোধ করতে হবে না। আর ইসিএফের ঋণ পরিশোধ করতে হবে না সাড়ে ৫ বছর পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাস, যন্ত্র ও পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। সেই চাপ সামলাতেই মূলত আইএমএফ দাতা সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। আমরা দেখতে পেয়েছি, সাম্প্রতিক সময়ে ফরেন এক্সচেঞ্জের একটি বড় ধরনের সরবরাহ ঘাটতি আছে বাংলাদেশে এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ওপর যথেষ্ট প্রেশার আছে। সেই চাপ একটু কমানোর জন্য সরকার এখন আইএমএফর কাছে গেছে।

গত এক দশক ধরে ফরেন এক্সচেঞ্জ নিয়ে এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়ানি বাংলাদেশ। কারণ এই সময়ে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানিÑদুটোই কম বেশি ভালো করেছে। কিন্তু এখন বিশ্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার কারণে রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রপ্তানি ভালো হলেও আমদানি যে হারে বেড়েছে তাতে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে একটা চাপ তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় খরচ বেড়ে চলায় ক্রমশ রিজার্ভের পরিমাণ কমছে। এই ঋণের ফলে ডলার সংকট বিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো যাবে। তাই এই অর্থনৈতিক অবস্থায় এটা কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর। ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট যে তীব্র আকার ধারণ করেছে তা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা ফিরবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তাছাড়া, এর ফলে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ও ভাবমূর্তি দুটোই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হয়। মনে রাখতে হবে, এটা কোনো বড় ঋণ নয়। চার দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ডলার ও রিজার্ভের সংকট তেমন কাটবে না। তাই রেমিট্যান্স ও রপ্তানি দুটোই বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে।

ব্যাংকার

ma-masum@yahoo.com