রহমত রহমান: অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ইউজার আইডির অপব্যবহারের সঙ্গে সাত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এসব এজেন্টের লাইসেন্সের বিপরীতে অখালাসকৃত পণ্য চালান ও নতুন দাখিল করা বিল অব এন্ট্রি স্থগিত করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজকে চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা।
সাতটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মধ্যে অন্যতম ঢাকার এমআর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চাকলাদার সার্ভিসের বিরুদ্ধে মামলা ও মালিক মো. মিজানুর রহমান চাকলাদারকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে ‘চট্টগ্রাম বন্দরে অভিনব পন্থায় কনটেইনার খালাস: অবসরে কর্মকর্তা আইডি সচল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাসাইকুডার মতো একটি অত্যাধুনিক ও সুরক্ষিত সিস্টেমের স্পর্শকাতর ইউজার আইডির কীভাবে অপব্যবহার হয় এবং কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পরও কীভাবে আইডি সচল থাকে। প্রাথমিকভাবে দুজনের আইডি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আরও কত কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার হচ্ছে বা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা কনটেইনার গায়েব হওয়ার নৈপথ্যে এ কারণ থাকতে পারে।
শুল্ক গোয়েন্দা চিঠিতে আইডি অপব্যবহারের যে সাতটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নাম উল্লেখ করেছে সেগুলো হলো এমআর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চাকলাদার সার্ভিস, স্মরণিকা শিপিং কাইজেন লিমিটেড, মেসার্স লাইলা ট্রেডিং কোম্পানি, এমঅ্যান্ডকে ট্রেডিং করপোরেশন, লাবণী এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ও মজুমদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তিনটি ফরম্যাটে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ফরম্যাটে মালিকের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। দ্বিতীয় ফরম্যাটে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স ইস্যু করা কাস্টমস সরকার ও জেটি সরকারের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার। তৃতীয় ফরম্যাটে সাতটি লাইসেন্সের মধ্যে কোনটি রেফারেন্স লাইসেন্স হলে মূল লাইসেন্সের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব লাইসেন্সের বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কোনো অখালাস চালান ও নতুন বিল অব এন্ট্রি থাকলে তা জরুরি ভিত্তিতে স্থগিত করতে অনুরোধ করা হয়।
অব্যবহৃত ও সন্দেহজনক আইডি বন্ধ করার সুপারিশ করা চিঠিতে বলা হয়, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) কমিশনারেটে কর্মরত। চট্টগ্রাম কাস্টমসে থাকাবস্থায় তাকে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ইউজার আইডি দেওয়া হয়। তিনি বদলি হলেও আইডি সচল থাকে। এ আইডি ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন হাজার ৬৮১ বার সিস্টেমে লগইন করে চালান খালাস নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ আইডি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া চালান খালাস নেওয়া হয়েছে। এ আইডিসহ সব অব্যবহƒত ও সন্দেহজনক আইডিগুলো জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজকে অনুরোধ করা হয়েছে। অপর চিঠিতে রাজস্ব সুরক্ষা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে যেসব কর্মকর্তা বদলি হয়েছে বা অবসরে গেছে তাদের আইডি বাতিল করার অনুরোধ করা হয়। এছাড়া যেসব কর্মকর্তাকে আইডি দেওয়া আছে, তা মাসিক ভিত্তিতে যাচাই করতে বলা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমসে দুটি আইডির বিপরীতে জালিয়াতি করে প্রায় চার হাজার চালান নেওয়ার তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। অন্য কাস্টমস হাউজে একই ঘটনা ঘটেছে কি না, তা অনুসন্ধান করছে শুল্ক গোয়েন্দা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তা ডিএএম মুহিবুল ইসলামের আইডি থেকে ১১৬ বার আর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হকের আইডি ব্যবহার করে তিন হাজার ৬৮১ বার করে পণ্য খালাস নেওয়া হয়েছে। আমরা প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। এ দুটি আইডিসহ অব্যবহৃত বা সন্দেহজনক আইডি বন্ধে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জারা এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চাকলাদার সার্ভিস জালিয়াতিতে যুক্ত। এছাড়া এমআর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে অপর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে বেশিরভাগ চালান খালাস হয় বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়েছে। এছাড়া এমআর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও চাকলাদার সার্ভিসের মালিক মো. মিজানুর রহমান চাকলাদারকে কাকরাইল থেকে আটক করা হয়েছে। এ জালিয়াতির চক্রের অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।